Tuesday, May 7সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

৪৫ বছরের আগে পিএইচডি নয়

সীমান্ত ডেস্ক: বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশে ফিরে ক্যাডার কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিতে চাইলেই সরকারি টাকা ফেরত দিতে হবে। চাকরি স্থায়ী না হলে কেউ বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা প্রশিক্ষণে যেতে পারবেন না। মাস্টার্স কোর্স অধ্যয়নের জন্য এক জন কর্মকর্তা একবারের বেশি বিদেশ যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন না।

এছাড়া কোনো কর্মকর্তা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে মাস্টার্স অথবা ডিপ্লোমা কোর্স অধ্যয়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে পোস্ট ডক্টরাল কোর্সে কোনো বাধা নেই। বিদ্যমান বিদেশ প্রশিক্ষণ বিধিমালায় এ ধরনের নানা গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সিপিটি ড. মো. সহীদুল্যাহ গতকাল সোমবার আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিধিমালাটি সংশোধনের কাজ এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলা যায়। আমরা আগের বিধিমালা ও সংশোধনীসহ একটি সংকলন আকারে প্রকাশ করতে চাই।

ইতোমধ্যে বিপিএটিসির মতামত নেয়া হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে তার উপস্থিতিতে একটি সভা করব। সেই সভায় বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি সময় দিলেই সভার তারিখ চূড়ান্ত করব। বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও প্রশিক্ষণ বিধিমালাটিতে বাস্তব সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সংশোধনী না আনা হলে সমস্যা আরো প্রকট হবে। অনেকে একটি কোর্স সম্পন্ন করার অনুমতি নিয়ে দুটি কোর্স সম্পন্ন করছেন। অনেকে দেশেই ফিরছেন না। রাষ্ট্রের খরচে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অনেকে দেশে ফিরেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও প্রশিক্ষণ বিধিমালায় বেশ কিছু সংশোধনী আনার কথা ভাবছি।’

আগে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সংগ্রহ করে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিত। এখন থেকে এ ধরনের বৃত্তি সংগ্রহ উম্মুক্ত থাকবে। আগে বিদেশের যে বৃত্তির খরচ ওই দেশ কিংবা সংস্থা বহন করত না, সে ক্ষেত্রে খরচের টাকা বিভিন্ন চেম্বার, বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন, ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সংগ্রহ করত। এখন থেকে বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারি সংস্থার কাছ থেকেও নেয়ার বিধান করা হচ্ছে।

ব্যক্তির নামে কোনো বৃত্তির প্রস্তাব এলে তা তার বর্তমান দায়িত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে এবং সব খরচ আমন্ত্রণকারী সংস্থা বহন করলে ওই বৃত্তি গ্রহণের সুযোগ ওই কর্মকর্তাকে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করার বিদ্যমান নিয়ম তুলে দেয়া হচ্ছে।

ওরিয়েন্টেশন কোর্স, স্টাডি ট্যুর এবং আট সপ্তাহের কম মেয়াদি বৃত্তির ক্ষেত্রে অবসরের কাছাকাছি কর্মকর্তাদের পাঠাতে হবে। এ ধরনের বৃত্তির ক্ষেত্রে আগে ৫৬ বছর বয়সিদের প্রধান্য দেয়া হতো। এখন থেকে ৫৮ বছর বয়সিরা প্রধান্য পাবেন। ছয় মাস মেয়াদি কোর্সের ক্ষেত্রে আগে বিদেশ যেতে বয়সসীমা ছিল ৫২ বছর। এখন থেকে তা হবে ৫৪ বছর। ছয় মাসের বেশি সময় চলা কোর্স মধ্য মেয়াদি এবং আগে এ ধরনের কোর্সে ৪৫ বছর বয়সি কর্মকর্তারা যেতেন। এখন থেকে ৪৮ বছরের নিচে কেউ যেতে পারবেন না।

তবে দীর্ঘমেয়াদে চলা কোনো কোর্সে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। আগে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে যাওয়ার বয়স ছিল সর্বনিম্ন ৪০ বছর। এখন থেকে তা হবে ৪৫ বছর। এর আওতায় তারা এমএস, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরাল রিসার্স কোর্সে অংশ নিতে পারবেন। তবে বৃত্তি প্রদানকারী দেশ কিংবা সংস্থা যদি প্রার্থীর বয়সসীমা শিথিল করে তাহলে উল্লিখিত শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

আগে চাকরিতে যোগদান করেই কর্তাব্যক্তিদের বিশেষ আশীর্বাদে অনেকে উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা বৃত্তির জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতেন। এখন আর সেই সুযোগ থাকছে না। বুনিয়াদি ও বিভাগীয় প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি স্থায়ী হলেই কেবল তিনি বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কোর্সের মেয়াদ বাড়াতে পারবে।

তবে কোর্সের বিষয় পরিবর্তনের জন্য দাতা সংস্থার সুপারিশ বৃত্তি বরাদ্দ কমিটির বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে কমিটি যৌক্তিক মনে না করলে বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না। এখন থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিবর্তে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করা কর্মকর্তা ও শিক্ষার অগ্রগতি তদারকি করবে।

বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়া কর্মকর্তার মুচলেকায় জামিনদারের বিদ্যমান শর্ত তুলে দেয়া হচ্ছে। বিদেশে বৃত্তি কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাঁচ বছরের বেশি অবস্থান করা যাবে না। কোর্সের মেয়াদ বাড়বে শুধু বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে। কোর্সের মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি হলে সরকার অতিরিক্ত খরচ বহন করবে না।

বিদ্যমান বিধিমালা থেকে বাংলাদেশের বিমান বন্দরে বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য ভ্রমণ ও আরোহিত ফি ছাড়া অন্যান্য ফি আদায় করার যে শর্ত রয়েছে তা তুলে দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা লাভের পর দেশে ফেরত কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদে পদায়নের যে নিময় রয়েছে তা তুলে দেয়া হচ্ছে।

শেয়ার বাটন