Thursday, May 16সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

মানবিক পুলিশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ

হাসানুজ্জামান সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: নবনিযুক্ত ডিএমপি পুলিশ কমিশনার ও সাপ্তাহিক একুশে এর নির্বাহী সম্পাদন হাসানুজ্জামান সুমনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং ডিএমপি পুলিশ কমিশনার তার কর্মময় জীবনের অনেক গল্প উঠে আসে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৬তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি সদর দপ্তরে বিদায়ী কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছ থেকে তিনি এ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব সিরাজাম মুনিরা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে হাবিবুর রহমানকে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা ও মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। এসএম মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।
চাকরি জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তার সৃষ্টিশীল চিন্তাচেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার সাক্ষর। নেতৃত্ব আর সৃজনশীলতা দিয়ে প্রশিক্ষণকালেই ‘আমার হলো শুরু’র সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ডিএমপির ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় মেধা ও নেতৃত্বগুণে তিনি সাধারণ মানুষ, সহকর্মী ও অধস্তন পুলিশ সদস্যের কাছে হয়ে উঠেন মানবিক পুলিশি সেবার উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ স্বীকৃতি পায় তার অনন্য উদ্যোগের মাধ্যমে।
ডিসি হেডকোয়ার্টার্স থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বাস্কেটবল এবং কাবাডি টিমের দায়িত্ব গ্রহণ করে পুলিশ টিমের খেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনেন।
হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অভিনব কর্মকৌশল প্রয়োগ করেন। তিনি সাধারণ মানুষকে পুলিশের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জনগণের পুলিশ হিসেবে চিত্রিত করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তরে সফলভাবে কাজ করার পর ডিআইজি হিসেবে ঢাকা রেঞ্জে যোগদান করেন হাবিবুর রহমান। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে করোনাকালীন সমাজের নিম্নস্তরের ও পিছিয়ে থাকা মানুষদের সহায়তা, পুলিশ নিয়োগ ও পদায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, জনগণকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করা, মনিটরিং সেল স্থাপনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যান, যা অন্যান্য পুলিশ ইউনিটের জন্য অনুকরণীয় হিসেবে প্রকাশ পায়।
দীর্ঘ তিন বছর ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত জীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যেমন লাভ করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তেমনি অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। তিন বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুই বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন।
মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে বদলে গিয়েছে বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবন। কাজ করেছেন যৌনপল্লির শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে। দেশজুড়ে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা ও কবরস্থান নির্মাণ করেছেন।
পুলিশের চাকরির পাশাপাশি লেখালেখি-গবেষণাতেও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। তার সম্পাদিত গ্রন্থ ‘Speeches of Sheikh Hasina’, ‘শেখ মুজিবের চিঠি’ ও একই বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ ‘Letters of Sheikh Mujibur Rahman’, ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’, ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’, ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ- এসব বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে আসে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা।
এছাড়া হাবিবুর রহমানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার পাঠক সমাজে আলোচিত। এ বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন। গ্রন্থটির জন্য হাবিবুর রহমান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক-২০২৩’ লাভ করেন।
হাবিবুর রহমানের হাত ধরে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ‘ওয়েসিস’ টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়। যেখানে বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়।
তার আরেকটি মানবিক উদ্যোগ ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক যা করোনা রোগীদের প্লাজমা এবং ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট সরবরাহ করে কোডিড-১৯ ও ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের মাসিক প্রকাশনা ‘দি ডিটেকটিভ’ সম্পাদনা করছেন।
সংস্কৃতিমনা হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা। তার গবেষণা ও দিকনির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়েছে জনপ্রিয় ‘অভিশপ্ত আগস্ট ও ‘অচলায়তনের অপ্সরী’ নাটক।
হাবিবুর রহমান একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক। তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সেক্রেটারি ও এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি হাবিবুর রহমানের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন উচ্চতায় আবির্ভূত হয়।
তার গতিশীল নেতৃত্বে দেশে বাংলাদেশ গেমস, যুব গেমস, জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা, আইজিপি কাপ জাতীয় যুব কাবাড়ি, প্রিমিয়ার কাবাডি লীগ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ কাবাডি লীগসহ অসংখ্য কাবাডি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বকাপ কাবাডিতে বাংলাদেশ কাবাডির অবস্থান ৫ম। এছাড়া এশিয়ান কাবাডিতে ৫ম ও সাউথ এশিয়ান কাবাডিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য়। কাবাডিতে তার অভূতপূর্ব উদ্যোগের কারণে ২০২২ সালে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর মধ্যে কাবাডি ফেডারেশন শ্রেষ্ঠ ফেডারেশন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ডিএমপির ৩৬ তম কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর রাজার বাগ পুলিশ লাইনে যান ও সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ পুলিশদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এর পর কনস্টেবলদের খাওয়া দাওয়া ম্যাচ পরিদর্শন করেন, তারপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ধানমন্ডি ৩২ এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরে ০১লা অক্টোবর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের টঙ্গী সমাধিস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । পরে ০২ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার মিট দ্যা প্রেস: সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে তার পরিকল্পনার সম্পর্কে তুলে ধরেন।
তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন কোন সন্ত্রাসী,কোন চাঁদাবাজির স্থান ঢাকা শহরে নেই।
আসন্ন দুর্গাপূজা ও নির্বাচন নিয়ে তিনি কঠোর হুঁশি দিয়ে বলেন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
তিনি সাংবাদিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২এ অক্টোবর সাংবাদিকদের জন্য সুন্দর একটি রুম এসি সোফা এবং কম্পিউটার প্রদান করার জন্য সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫এ অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণ করেন এতে সাংবাদিকবৃন্দ সবাই খুশি হন এবং তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
এরপর তিনি ডিবি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করে এবং ডিবি অফিসকে মানুষের আস্থা জায়গা হিসাবে গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন।
৫ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে শিশু একাডেমিতে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২৩ উপলক্ষে,” আমরা কথা শোনা,ছোটরা বলবে,বড়রা শুনবে” শিরোনামে পুলিশ আমার বন্ধু শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন ডিএমপি কমিশনার। যিনি পুলিশ সম্পর্কে তাদের সামনে খুব ভালো ধারণা প্রদান করেন। তার কথা শুনে শিশুরা পুলিশ অফিসার হওয়াতে উৎবুদ্ধ হয় এবং শিশুরা তাকে প্রশ্ন করে কিভাবে পুলিশ অফিসার হওয়া যায়। সবার সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি শীঘ্রই একটি হট লাইন নাম্বার চালু করার কথা বলেন। মেসেজ টু কমিশনার যে কোন প্রয়োজনে তোমরা সহ সবাই সরাসরি কমিশনারের সাথে মেসেজে ও কথা বলতে পারবে।
একজন সৃজনশীল আর ব্যতিক্রমী কর্মদ্যোগের মানুষ হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
যিনি ০৬ই অক্টোবর শুত্রুবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ৬ নং মেসে ফোর্সের সঙ্গে একই টেবিলে দুপুরের খাবার খেলেন, যা পূর্বে কখনো দেখা যায়নি।
নব নিয়োজিত কমিশনার এর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি,যেন তিনি আমাদের ঢাকা বাসিকে সৃজনশীল এবং সুন্দর সুন্দর ভালো কাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে মানুষের ও মানবিক পুলিশ হিসাবে সবার হৃদয়ে থাকতে পারেন।

শেয়ার বাটন