Sunday, May 19সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

কালীগঞ্জে সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে: কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) বর্তমানে ও,এস,ডি দুর্নীতিবাজ বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শেখ তৈয়বুর রহমানের স্বাক্ষর জালিয়াতি অর্ধ লক্ষ্ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় হাসপাতালের প্রধান সহকারি হিসাব রক্ষক তরিকুল ইসলাম এবং এমটি (ইপিআই) মশিউর রহমান এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত (ওএসডি) ডা: শেখ তৈয়বুর রহমানের দায়ের করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) বেলা ১১ টার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের গঠিত তদন্ত কর্মকর্তা আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মিনাজুল হক এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের পুলক চক্রবর্তী এবং ডা: এস এম এ মুক্তাদির তামিম গঠিত তদন্ত দল কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। তদন্ত শেষে তদন্ত কমিটির সভাপতি আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান যেহেতু বিষয়টি একেবারেই গোপনীয় অফিসিয়াল তাই আমরা প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করে উভয়ের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেছি। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকেরগঠিত তদন্ত দল পুরা বিষয়টির তদন্ত করলে আসল সত্যতা জানা যাবে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী হিসাব রক্ষক তরিকুল ইসলাম এবং এমটি ইপিআই মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান আমরা হুকুমের সরকারি চাকরি করি। আমাদের ইচ্ছা মত বিল বানিয়ে আত্মসাৎ করার কোন সুযোগ নাই। সব কাগজে তিনি স্বাক্ষর না করলে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে বিল পাস হয় না। কালীগঞ্জ হাসপাতালে দায়িত্ব থাকতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোপনে কাগজ তৈরি করে নিজের দুর্নীতি অপকর্ম ঢাকতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য।

প্রসঙ্গত : কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হাবিবুর রহমানের পুত্র ডা:শেখ তৈয়বুর রহমান বিসিএস ক্যাডার না হওয়া সত্ত্বেও ২০১০ সালে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রভাব খাটিয়ে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের( ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি কখনো ভারপ্রাপ্ত শব্দটি ব্যবহার করতেন না। কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে যেমন খুশি তেমন ভাবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তার কথার অবাধ্য হলে বিশেষ করে ওই হাসপাতালের নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের নানান ভাবে হয়রানি করা হতো। তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে হাসপাতালে দেওয়া সরকারি ঔষধ কালোবাজারে বিক্রি করে জনসাধারণের প্রাপ্য স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করা, জরুরী বিভাগে মালি হান্নানকে দিয়ে কাটা ছেঁড়া সেলাই করানো, ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ জনৈক মিজানুর রহমানকে দালাল হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রোগীদের থেকে অর্থ আদায়, হাসপাতালের সরকারি কোয়াটার ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ,হাসপাতালের গাছ এবং ফল বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ, প্রধানসহকারী হিসাবরক্ষক তরিকুল ইসলাম এবং প্রাক্তন হিসাব রক্ষক অরবিন্দু কুমার ঘোষ, শামসুর রহমান এর মাধ্যমে হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ সহ বিভিন্ন ভুয়া বিল বানিয়ে টাকা আত্মসাতের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা,নিজের এবং হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্মীয়-স্বজনকে সেবক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া,রোগীদের ঔষধ না দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কমিশন পেতে বাইরে ক্লিনিকে পাঠানো, ডাক্তারি সনদের জন্য মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ,হাসপাতালের ক্যাশিয়ার মহসিন এবং ডাক্তার তৈয়েবুব মিলে হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের টাকা যেমন পরিচ্ছন্ন গাছ লাগানো বাগান নির্মাণসহ অন্যান্য খাত থেকে ২০২০-২১-২২অর্থ বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা,হাসপাতালের সরকারি গাড়ি তার নিজের ব্যক্তিগত ও বাড়ির কাজে
সার্বক্ষণিক ব্যবহার করা এবং বাড়িতে রাখা , হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার না করে ব্যবহার দেখিয়ে তেলের টাকা আত্মসাৎ, তার কথা না শোনায় হাসপাতালের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এস এ সি এম কিউ) স্বপ্না খানম কে হয়রানি সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে উপজেলা বাসি এবং হাসপাতালের ভুক্তভোগী স্বপ্না খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। হাসপাতালের নানান অনিয়ম-দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে ফলাও ভাবে প্রকাশ পায়।

উক্ত ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শেখ তৈয়েবুর রহমান তার বাড়িতে ডাকাতি ও আগুন লাগানোর ঘটনা সাজিয়ে কালিগঞ্জ থানায় প্রভাব খাটিয়ে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আসামি করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী স্বপ্না খানম এর স্বামী মৌতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের আকরামুল ইসলাম পলাশ, সাংবাদিক জি,এম মামুন, তার বেকারিতে কাজ করতে না চাওয়া কর্মচারী বাড়ির পাশের মহিষকুর গ্রামের শের আলী, এবং ড্রাইভার রেজাউল ইসলাম ও তার প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য সৈয়ব আলী ওরফে বুলল্লা মেম্বার কে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়লে নানান সমালোচনার মুখে তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে তারা রেহাই পায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় প্রথম পর্যায়ে যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা: শেখ আবু শাহিন গত২২/১/২০২০ তারিখে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে পুনরায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক তদন্ত কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ খালিদুর রহমান মিয়া তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ শৃঙ্খলা অধি শাখা গত ১/৬ /২০২১ তারিখে৪৫.০০.০০০০.১২২.২৭.০৪৮.২১-২০৫ স্মারকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: শেখ তৈয়বুর রহমান এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলাও আপিল বিভাগ বিধিমালা ২০১৮ মোতাবেক ৩৭/ ২০২১ বিভাগীয় মামলা দয়া করে। এরপর গত ১৬/ ৪ /২০২৩ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এস ডি করেন। তবে সোমবার তদন্তের সময় হাসপাতালে গেলে নাম প্রকাশ না করার সত্বে অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী সাংবাদিকদের জানান ডা: তৈয়বুর রহমান( ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকাকালীন এক, এক সময় এক ধরনের স্বাক্ষর করতেন তার প্রমাণও আমাদের নিকট আছে। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা অন্যকে ফাঁসানোর জন্য নিজে যা খুশি তাই করতে পারেন।

শেয়ার বাটন