Saturday, May 18সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

হাজারীবাগের ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার-৫

হাসানুজ্জামান সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: আজ ২২ শে জুলাই ২০২৩ দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানান,মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম-বার, পিপিএম-বার,অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি), ডিএমপি।
তিনি আরও বলেন,গত ২৮ জুন ২০২৩ তারিখে এখলাছ নামক হাজারীবাগ/কামরাঙ্গীরচরের এক ভূমি ব্যবসায়ী রাত অনুমান সাড়ে দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে পরবর্তীতে আর ফিরে নি। আত্মীয়-স্বজন তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে থানায় একটি জিডি করে। ঈদের পরের দিন সকালে হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পশ্চিম পাশে কাঁটাতারের বেড়া ঘেষা প্রান্তে সাদা রঙের প্লাস্টিকের বস্তায় এক ব্যক্তি লাশ উদ্ধার করে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। এখলাছের আত্মীয়-স্বজন সেখানে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। একই দিনে হত্যা এবং লাশ গুমের ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রজ্জু হয় কামরাঙ্গীরচর থানায়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এ হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটনে আপ্রাণ চেষ্টা করে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগও ছায়া তদন্ত শুরু করে ।
কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ ইতোমধ্যে লাশ গুমের ঘটনায় ভ্যানচালক এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটনস্হল ” টপ টেইলার্স” এর দর্জি/ মালিককে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণ করে। গত ১৬.৭.২০২৩ তারিখে মামলাটির তদন্তভার ডিবি লালবাগ বিভাগকে প্রদান করা হয়। দুইজনের স্বীকারোক্তি, গোয়েন্দা তথ্য এবং ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিবি পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারী/ অর্থদাতা/ হুকুমদাতা, দুইজন কিলার এবং তাদের সমন্বয়কারীকে শনাক্ত করে। বিমানবন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয় মূল পরিকল্পনাকারি/ হুকুমদাতা/ অর্থদাতা এবং সমন্বয়কারীদের একজন ঘটনার পরে সংগোপনে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যথাক্রমে থাইল্যান্ডে এবং কলিকাতায় পালিয়ে যায়। ২০.৭.২০২৩ তারিখে থাইল্যান্ড থেকে আকাশ পথে ঢাকায় ফেরত আসাকালে বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ গ্রেফতার হয় ঝন্টু মোল্লা। ঝন্টু মোল্লা মূলত: শূন্য থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়া মোঃ মনির হোসেন@ কোম্পানি মনিরের ক্যাশিয়ার। ঝন্টু বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ০৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে। ঝন্টুর কাছে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম অভিযানে নামে।
ডিবির ১টি টিম এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে কিলার আঃ রহমান @ রহমান কাল্লুকে এবং সমন্বয়কারী মোঃ এসহাককে গ্রেফতার করে। ডিবির অপর দুইটি টিম মাগুরা জেলায় এবং যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে কিলার ফয়সাল এবং মূল পরিকল্পনাকারী,হুকুমদাতা,অর্থদাতা শিল্পপতি মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনিরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেপ্তার কালে মনিরের কাছে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল, ২২ হাজার বাংলাদেশী টাকা আর ৫ হাজার ইন্ডিয়ান রুপি উদ্ধার করে। মনিরের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত ১৫ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে সে কলিকাতায় পালিয়ে যায়।
বীভৎস এ হত্যাকান্ড এবং কোরবানির ঈদ পরবর্তী চামড়ার ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে গোপনে কাজ করার জন্য ঝন্টু আকাশপথে থাইল্যান্ড থেকে ঢাকায় আর কোম্পানি মনির কলকাতা থেকে চোরাই পথে বেনাপোল দিয়ে যশোরে প্রবেশ করে কাজ শেষে আবার একই চোরাই পথে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তার পাসপোর্ট পর্যালোচনাতে দেখা যায় সে বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন করেছে কিন্তু ইমিগ্রেশন করলে ধরা পড়তে পারে এই শন্কায় বৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাই।
কেন এ হত্যাকান্ড:
১. হাজারীবাগ এবং সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমি দস্যূ এবং দালালও বটে। বিভিন্ন সময়ে সে ভিকটিম এখলাছকে দিয়ে জায়গা দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করিয়েছে। কামরাঙ্গীরচর থানাধীন সিএস ২২ দাগের একটা বড় জমিতে নিহত Victim এখলাছের ৪০ শতক জায়গা আছে যার অধিগ্রহণ মূল্য কোটি কোটি টাকা। কোম্পানি মনির এই জায়গাটি নিজের দখলে নিয়ে সমুদয় অধিগ্রহণ মূল্য গ্রাস করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এই চেষ্টা রোধ করতে ভিকটিম এখলাছ একাধিক মামলা দায়েরসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ করেছে। নানা ফন্দি ফিকির করে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানি মনির এই হত্যার পথ বেছে নেয়।
২. ভিক্টিম এখলাছের দ্বিতীয় স্ত্রী বিথি। কোম্পানি মনিবের সহায়তায় এখলাছ তাকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে এখলাছের বিশ্বাস হয় যে কোম্পানি মনির নানাভাবে। কে এই মনির: নোয়াখালীর এক দিনমজুর আঃ রহিমের ছেলে এই মনির হোসেন। আব্দুর রহিম হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানায় ডেইলী লেবারের কাজ করতো ৭০ দশকে। ১৯৮০-৮২ সালে পিতা আব্দুর রহিমের সাথে মনির হোসেন ট্যানারি কারখানায় অবস্থান করে চামড়ার গায়ের ময়লা পরিষ্কারের কাজ নেয়। পরবর্তীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেই কেনাবেচা শুরু করে কাঁচা চামড়া সাথে ভূমি দখল ও ভূমির ব্যবসা। এভাবেই শূন্য থেকে সে হয়ে ওঠে চার-পাঁচটি টেনারী এবং শত শত কোটি টাকার মালিক। ২০০২ সালে সিকদার পেট্রোল পাম্পের সামনে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় রুহুল আমিনকে রুহুল আমিনের হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি ছিল এই লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনির ওরফে মনির হোসেন। ২০১৫ সালে ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে জসিম ওরফে গুন্ডা জসিম নামক একজনকে হাজারীবাগ বাজারের মধ্যে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের বাহিনী দিয়ে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করায় সে। টাকা এবং প্রভাবশালীদের তদবিরে সে বিভিন্ন সময়ে ছাড়া পেয়ে যেতে বলে অন্যায় সংগঠনে সে হয়ে ওঠে অত্যান্ত বেপরোয়া।
আসামিদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণপূর্বক পুলিশ রিমান্ড এনে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন,পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ সাংবাদিকবৃন্দ।

শেয়ার বাটন