Saturday, May 18সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

সংশোধন হচ্ছে সচিবালয় নির্দেশমালা

সীমান্ত ডেস্ক:

  • যুক্ত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম
  • অধীনস্থদের ছুটির আবেদনে সুপারিশ করবেন এওরা 
  • এও, পিও, স্টেনোদের দেয়া হবে ল্যাপটপ 
  • স্টেনোরা ফাইল উপস্থাপন করতে পারবেন
  • অফিস সহায়কদের এসিআরের আওতায় আনা হচ্ছে  

বাংলাদেশ সচিবালয় নির্দেশমালা-২০১৪ সংশোধন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপের কোনো বিশেষ নমুনা সচিবালয় নির্দেশিকায় নেই। ফলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপ নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। 

সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য প্রেরিতব্য সারসংক্ষেপের প্রমিত একটি নমুনা এই নির্দেশিকায় সংযোজন করা হচ্ছে। দাপ্তরিক নেমপ্লেটে আগে শুধু সচিব লেখা থাকত। এখন থেকে সচিব ও সিনিয়র সচিব লেখা যুক্ত হবে। এক সময় দাপ্তরিক কাজে ব্যাপকভাবে ফ্যাক্স ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও এখন তা খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক। 

তাই বাংলা বা ইংরেজি ফ্যাক্স বাদ যাবে সচিবালয় নির্দেশমালা থেকে। এখন থেকে দাপ্তরিক কাজে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও অফিস সহায়কদের ছুটি দিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তার সুপারিশ নেয়া হবে।

এখানেই শেষ নয়, বরং অফিস সহায়কদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন-এসিআরের আওতায় আনা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে নতুন এসিআর ফরম তৈরি করে তা সচিবালয় নির্দেশমালায় সংযোজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সচিবালয় নির্দেশিকা সচিবালয়ের বাইরে সব দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার, জেলাপ্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অনুসরণ করা হয়। সুতরাং এ নির্দেশমালার নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন নাম হিসেবে সচিবালয় ও সরকারি অফিস কার্যনির্দেশিকা অথবা প্রশাসনিক তথা দাপ্তরিক নির্দেশিকা প্রস্তাব করা হয়েছে। 

সচিবালয় নির্দেশমালা সংশোধনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম আমার সংবাদকে বলেন, আমরা সংশোধনে হাত দিয়েছি। যেখানে যেখানে অসঙ্গতি আছে তা দূর করা হবে। এখনো কাজ চলমান। আমরা অন্যদেরও মতামত চাইব।    

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হলেও তার অনেক কিছুই উল্লেখ নেই সচিবালয় নির্দেশ মালায়। প্রশাসনের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহূত ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফম অর্থাৎ জুম আইডি, জুম মিটিং, ভার্চুয়াল মিটিং, হোয়াট অ্যাপস ও ভাইবারসহ অন্যান্য পদ্ধতিগুলো সচিবালয় নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে ই-নথিতে ফাইল নিষ্পত্তি কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ ধারণা। সচিবালয় নির্দেশমালায় সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর অনুমোদিত খসড়ার পরিচ্ছন্ন প্রস্তুত করার কথা থাকলেও নথি উপস্থাপন করতে পারবে কি-না তা সুস্পষ্ট করে উল্লেখ নেই। 

পক্ষান্তরে মাঠপর্যায়ে সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকরা নথি উপস্থাপন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সচিবালয়ে কর্মরত সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকরা নথি উপস্থাপন করতে পারবে কি-না তা সচিবালয় নির্দেশিকায় সংযোজন করা হচ্ছে। অর্থাৎ তারা ফাইল উপস্থাপনের এখতিয়ার পাচ্ছেন।

মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তারা অনেক সময় দাপ্তরিক প্রয়োজনে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে হয়। তবে তাদের সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য স্থায়ী পাস না থাকায় অনেক সময় তারা সাধারণ পাস বা অফিস আদেশে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য স্থায়ী পাস চালু এবং বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে এতে সমস্যাও আছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা। 

মাঠপ্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তারা অবাধে সচিবালয় প্রবেশের ফলে অনেক সমস্যা তৈরি হবে। তারা দাপ্তরিক কাজ ফেলে রেখে সচিবালয় এসে বসদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে প্রকল্প পরিচালকরা এই কাজে পারঙ্গম। এতে অনেক সংকট তৈরি হবে। এছাড়া কিছু কর্মকর্তা থাকেন তাদের কাজই তদবির করা। অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো। বসের কান ভারী করা। 

এরা সচিবালয়ে অবাধে প্রবেশের সুযোগ পেলে যেটুকু কড়াকড়ি আছে সেই টুকুও বিনষ্ট করবে। মহামারি, অতিমারিসহ নানা অভিঘাতে বিশ্ব আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে অনেক কাজ দপ্তরে আবার অনেক কাজ বাসায় বসে করতে হয়। বাসায় কাজের সুবিধা কর্মকর্তাদের জন্য থাকলেও কর্মচারি অর্থাৎ স্টেনোটাইপিস্ট, অফিস সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নেই। সে ক্ষেত্রে তারাও যেন বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ করতে পারেন সে লক্ষ্যে তাদের ল্যাপটপসহ যাবতীয় সুবিধা দেয়ার বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এ ছাড়া মহামারি অতিমারির সময়ে দাপ্তরিক কার্যাবলি নিষ্পত্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে সচিবালয় নির্দেশমালায়। সেবাপ্রত্যাশীদের প্রতি সদাচরণ সংক্রান্ত নির্দেশনাবলির সংক্ষিপ্ত বিবরণে যুক্ত হবে। এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাপ্তরিক রুটিন কাজের সাথে সংযোগ করে তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও লিংকযুক্ত করা হবে। 

সচিবালয় লাইব্রেরি একটি আধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরি। এর সদস্যদের জন্য ই-কার্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরির সদস্যরা বই নিয়ে তা আবার ফেরত দিতে কালক্ষেপণ করেন। বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও বইগুলো ফেরত দেন না। সে ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে বদলি হলে লাইব্রেরির কার্ড ও বই অতিদ্রুত ফেরত দেয়ার বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত হরা হচ্ছে।   

শাখা পরিদর্শনের বিষয়ে সচিবালয় নির্দেশমালায় বলা থাকলেও তার কোনো প্রমিত নমুনা নেই। নতুন করে সচিবালয় নির্দেশমালায় এই নমুনা সংযোজন করা হচ্ছে। সচিবালয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একটি করে মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ থাকবে। এই অনুবিভাগের কাজ হলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিধিবিধান নিয়মকানুন মেনে যথাযথভাবে কাজ করছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করা। কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করছে কী না তা দেখভাল করা। 

এ অনুবিভাগ সব বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে ত্রৈমাসিক ও বাৎসরিক রিপোর্ট দেবে। এ অনুবিভাগ গোপনে অভিযোগ গ্রহণ ও অনুসন্ধান করতে পারবে। অনুবিভাগে একজন যুগ্ম সচিব অথবা উপসচিবের নেতৃত্বে কাজ চলবে। বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নাগরিক সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সচিবালয় নির্দেশমালা সব ক্ষেত্রে অনুসরণ নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

শেয়ার বাটন