Monday, May 6সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার সংঘাত নেই: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার সংঘাত নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে উৎসবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) কুষ্টিয়া, খুলনা, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও রংপুরে শিল্পকলা একাডেমির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানটি ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।

সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ দিতে সারাদেশের সব উপজেলায় একটি করে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা সারাদেশের ৪৯৩টি উপজেলায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলব যাতে প্রতিটি উপজেলার আমাদের শিশুরা তাদের সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পায়।

প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বলেন, উপজেলা পর্যায়ের সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে মাল্টিপারপাস হলটি এমনভাবে নির্মাণ করতে, যেখানে ফিচার ফিল্ম ও শর্ট ফিল্মসহ সিনেমা প্রদর্শন করা যায়।

এসময় প্রধানমন্ত্রী সকলকে বিশ্বব্যাপী বাঙালি সংস্কৃতির স্বকীয়তাকে আরও বিকশিত করতে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্যকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়, আবার আমাদের নতুন যুগের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রযুক্তির যুগে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সংস্কৃতি বিকাশের সুযোগ তৈরি করেছি, আমাদের সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে যাতে এগুলো আরও বিকাশ লাভ করতে পারে।

তিনি বলেন, ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে। এটি মোটেও ঠিক নয়।

‘ধর্ম, যার যার ধর্ম। আমরা এটাই বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। কাজেই উৎসব আমরা সকলে এক হয়ে পালন করব।’

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা সময় দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ পালন করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ১৪০০ সাল বরণ করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম- এটা হচ্ছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি রমনা বটমূলে বোমা হত্যা করেও মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, যাতে করে আমাদের সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ হয়ে যায়।

‘আজকে পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করি, এই একটা উৎসবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই, সব বাঙালি এক হয়ে আমরা কিন্তু এই পহেলা বৈশাখে উদযাপন করি।’

সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, যেকোনো একটি দেশে মানুষের জীবনে সংস্কৃতির চর্চা বা সংস্কৃতির বিকাশ এটা অপরিহার্য। কারণ এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে কিন্তু একটি জাতির স্বাতন্ত্র্যবোধটা আরও বেশি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। কাজেই আমরা সব সময় এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।

প্রান্তিক পর্যায়ের সংস্কৃতি কর্মীদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়াটা সরকারের লক্ষ্য বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি উপজেলা অর্থাৎ ৪৯৩টি উপজেলায় আমরা আমাদের কালচারাল কমপ্লেক্স গড়ে তুলব। যাতে প্রতিটি উপজেলা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাচ্ছি।

‘উপজেলা পর্যায়ে নির্মিতব্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ৪০০ আসনের মিলনায়তনসহ মাল্টিপারপাস হল থাকবে। সেই হলগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, সেখানে চলচ্চিত্র যেন দেখানো যায়। আমরা সেভাবেই করতে চাই। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখে প্রকল্পগুলো তৈরি করা এবং সেগুলোর প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।’

বাঙালির স্বকীয়তা ও সংস্কৃতিকে আরও উজ্জীবিত আর বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য আমরা ভুলব না। আবার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েও চলতে হবে। কারণ আধুনিক যুগের যে সংস্কৃতি তার সঙ্গেও যাতে দেশের ছেলেমেয়েরা, তারাও যেন তার সঙ্গে মিল রেখে চলতে পারে বা সেই সংস্কৃতিও যেন তারা রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে।

‘কাজেই আমি মনে করি, আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক জ্ঞানও অর্জন করা একান্তভাবে দরকার। একটা থেকে আরেকটা বাদ দেয়া যাবে না। আমাদের সামনের দিকেও এগিয়ে যেতে হবে।’

লোকজ সংস্কৃতিকে অমূল্য সম্পদ আখ্যা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, একেকটা অঞ্চলভিত্তিক যেসব লোকজ শিল্প যেমন, পালা গান, কবির লড়াই, কবিতা, গান যাত্রা- এ রকম বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে অনেক ঐতিহ্যও আমরা জানতে পারি। এগুলো চর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এগুলো বিকশিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

শেখ হাসিনা বলেন, সিনেমা আমাদের দেশের মানুষের বিনোদনের একটা অবলম্বন ছিল। যেটা পর্যায়ক্রমিকভাবে, আসলে প্রযুক্তির কারণে হোক, এটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, আমাদের প্রতিটি জেলায় উপজেলায় আবার সিনেমা হলগুলো তৈরি করা উচিত। সিনেমা হলের সঙ্গে শুধু সিনেমা হল না সিনেপ্লেক্স অর্থাৎ সিনেমা হলে সঙ্গে শপিং মলসহ সবকিছুই করতে পারেন।

এ জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, পুরনো সিনেমা হলগুলো ভেঙে আবার নতুনভাবে তৈরি করে, সেখানে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এই লক্ষ্যে আমরা কিন্তু এক হাজার কোটি টাকার একটা বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। যারা পুরনো সিনেমা হল ভেঙে নতুন সিনেমা হল তৈরি করবেন, তারা এখান থেকে বরাদ্দ পাবেন। এবং আরো নতুন নতুন সিনেমা হল যারা করতে চাইবেন তাদেরকেও এখান থেকে কিন্তু টাকা দেয়া হবে।

আটটি জেলার নবনির্মিত শিল্পকলা ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এগুলো যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যে যখন ব্যবহার করবেন অন্তত এগুলো যেন কোনোরকম ক্ষতি সাধন না হয়, সংরক্ষণটা ভাল হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। সরকার করে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সম্পদটা কিন্তু জনগণের, আপনাদের। কাজেই সে কথাটা মনে রেখে এটা যত্নসহকারে ব্যবহার করবেন, সেটাই আমি চাই।

খেলাধুলাসহ সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আট জেলায় নবনির্মিত আটটি শিল্পকলা একাডেমি ভবনের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার বাটন