Sunday, May 5সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

কম বেতনে মানবেতর জীবনযাপন নবাবগঞ্জের গ্রাম পুলিশদের

মোঃ জুলহাজুল কবীর, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান জানালেন, দেশের নবগঠিত সরকার গ্রাম পুলিশদের বিষয়ে কি চিন্তা ভাবনা করবে সে ব্যাপারে এখনই জানা না গেলেও ইতিপূর্বে কয়েকবার বিষয়টি আলোচনা সমালোচনায় এসেছে। আসলে তাদের বেতন ভাতা কম হওয়াটা কষ্ট দায়ক। তারা সীমাহীন কষ্টে জীবন সংসার চালায়।

দফাদার আর মহল্লাদার নামটি সবকিছু পরিবর্তনের সাথে ডিজিটাল হয়ে গ্রাম পুলিশ হয়েছে। দফাদারের বেতন ভাতা ৮ হাজার ২শ টাকা মহল্লাদারের বেতন ভাতা ৭ হাজার ৭শ টাকা। গ্রাম পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ স্থানীয় সরকারেরই একটি অংশ । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গ্রাম পুলিশ বিশেষ অবদান রাখলেও সীমাহীন কষ্টে ভরা গ্রাম পুলিশদের জীবন । সবসময় পাড়া -মহল্লা ও গ্রামের জনসাধারণের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখলেও গ্রাম পুলিশদের ভাগ্যের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছে না সরকারের কোনো পক্ষই । নামমাত্র স্বল্প বেতনে চলে তাদের কষ্টের জীবন সংসার। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৭৭ জন মহল্লাদার, ৪জন দফাদার কর্মরত আছেন। দফাদার-মহল্লাদার নাম ডিজিটাল হয়ে গ্রাম পুলিশ হয়েছে । ইউনিয়নের কোথাও সমস্যা দেখা দিলে সেখানেই ছুঁটে যান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে গ্রাম পুলিশ বেতন পান ৭ হাজার ৭শ থেকে ৮ হাজার ২শ টাকা। এর মধ্যে সরকারের অর্ধেক আর অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পান তারা । এই টাকাও তারা নিয়মিত পান না বলে অভিযোগ করেন গ্রাম পুলিশেরা। আবার উপজেলার ৬নং ভাদুরিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ মোঃ তাজমেল হক কান্না জড়িত কন্ঠে জানালেন, সে দীর্ঘ ২৫-২৬ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তার বেতন-ভাতা নাকি চেয়ারম্যান বন্ধ করে রাখছে। এমনিতেই এই টাকা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। তবে প্রশাসন বলছেন সরকারের অংশ নিয়মিতই পান তারা।

খোঁজ খবর নিয়ে আরও জানা গেছে , ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন তারা ২০১৬ সাল থেকে পাচ্ছেন । বর্তমান সময়ের বাজারে দ্রব্যেমূল্যের দাম বাড়লেও বাড়ানো হয়নি তাদের বেতন। ২০১৬ সালের আগে গ্রাম পুলিশ বেতন পেতেন ৩ হাজার ৫০০টাকা। ২০০৯ সালে তাদের বেতন ছিল ১ হাজার ৪০০টাকা।

ইতিপূর্বে মাসের পর মাস অপেক্ষা করার পর তারা বেতন তুলতে পারতেন। মাসিক বেতন ছাড়া তারা অন্যান্য সুযোগের মধ্যে শুধু মাত্র দুটি ঈদে তারা বেতনের সমপরিমাণ টাকা বোনাস পান। এ ছাড়া তাদের আর কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

গ্রাম পুলিশ ইউপি সচিবকে জন্ম-মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে দেন, ইউপি ভবন ও বিভিন্ন সড়কে রাত্রিকালীন সময়ে দায়িত্বপালন, গ্রাম আদালত, গ্রামে কোন সংস্থার কর্মসূচী চলাকালীন ও সড়ক দুর্ঘটনার স্থানে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত তথ্য প্রদান, অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর সংবাদ থানায় জানানো, মাদকদ্রব্য ও জুয়া প্রতিরোধে অভিযান চালানোয় সহযোগিতাসহ অগণিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন গ্রাম পুলিশ।

উপজেলার ৭নং দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আহসান হাবিব বলেন, আমার ইউনিয়নে ৯ জন গ্রাম পুলিশ রয়েছে। এ সকল গ্রাম পুলিশ সদস্যরাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সরকার নির্দেশিত কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে থাকেন। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমান জননেত্রীর সরকার সব ক্ষেত্রেই পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছেন। গ্রাম পুলিশদের ভাগ্য উন্নয়নে তার সরকারের অবশ্যই চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

৩০ বছর ধরে গ্রাম পুলিশে কর্মরত থাকা দাউদপুর ইউনিয়নের মালদহ গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ দফাদারের ছেলে মোঃ আজাদ আলী, লাউগাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের পুত্র মোঃ আফসার আলী দু:খ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, জীবনটাই কাটিয়ে দিলাম গ্রামের মানুষের সেবা করে । সেই তুলনায় আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হলো না। ৩ হাজার ৫শ টাকা থেকে চাকরী শুরু করে ২০২২ সালে বেতন এসে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭শ টাকায়। এ টাকা দিয়ে কি হয়? ছেলে মেয়েরা নতুন জামা চাইলে, ভালো কিছু খাবার খেতে চাইলে দিতে পারি না। বাবা হিসাবে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে ?

ইউনিয়নের কুন্দন গ্রামের মোঃ তয়েজ উদ্দিন গ্রাম পুলিশ বলেন, চাকরী জীবন প্রায় শেষের দিকে, কিন্তু জীবনে কিছুই করতে পারলাম না। সরকারি চাকরীর ক্ষেত্রে পোষ্য কোঠা থাকলেও আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোন কোঠা ব্যবস্থা নেই। এই শেষ জীবনে সরকারের কাছে আমাদের দাবি- আমাদের চাকরীটা যেন জাতীয়করণ করা হয় এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের চাকরীর ক্ষেত্রে কোঠা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়।
নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ তাওহীদুল ইসলাম বলেন, গ্রাম পুলিশেরা অনেক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বর্তমান সরকার আসার পরই এই বাহিনীর বেতন কয়েক ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাম পুলিশ তাদের বেতনের সরকারি অংশ নিয়মিতই পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বেতনের অংশ এখন তারা নিয়মিতভাবেই পাচ্ছেন শুনেছি। তহবিলে আসার পরপরই তারা পেয়ে যান।

নবাবগঞ্জ উপজেলা গ্রাম পুলিশ সংগঠনের সভাপতি মোঃ রুহুল আমীন জানান, নবাবগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ৯০জন গ্রাম পুলিশ সদস্য থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭৭জন। শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ,কর্মরতদের বেতন বৃদ্ধির জোর দাবী জানান তিনি।

শেয়ার বাটন