Monday, May 6সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

ঈশ্বরদীতে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন

পাবনা প্রতিনিধি : দশম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে আটকিয়ে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার আসামীরা ভিক্ট্রিমের বাবাসহ আত্মীয়দের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট, কুপিয়ে জখম করে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন গোয়েন্দ সংস্থার নজরদারীতে আনার লক্ষে ভিক্ট্রিমদের পক্ষে নারী-পুরুষসহ গ্রামবাসীরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছেন।
আজ (শুক্রবার) সকালে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের নিকড়হাটা গ্রামের বাজারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে নুর জামাল মোল্লা বলেন, চলতি বছরের ২৫ আগষ্ট সকালে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের নিকটহাটা এলাকার নিরিহ কমেদ আলী মোল্লার ১০ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একই এলাকার ওহিদ প্রামানিকের বকাটে ছেলে মোঃ হৃদয় (১৯) তার বন্ধু আকাশ (২০), আসলাম (১৯), তাসফিক (২০) ও সাব্বির (১৯) অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণকারী হৃদয় ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে তার বোনের বাড়িতে তিনদিন আটকিয়ে রেখে স্কুলছাত্রীটি কয়েক দফা ধর্ষণ করে। এই বিষয়ে ভিক্ট্রিম স্কুলছাত্রীর চাচা শুকুর মোল্লা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় বেশ কয়েকদিন ঘুরেও পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বাধার কারণে মামলা দায়ের করতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর আসামী ও তাদের আত্মীয় স্বজন সিদ্দিক সরদার (৫৫), লিটন সরকার (৩৮), শের আলী (৪১), রফিকুল ইসলাম (৫০), আকাশ (২০), সাব্বির (১৯), রাব্বি (১৮), আসলাম মন্ডলসহ অপরাপর আসামীরা দেশী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ভিক্ট্রিম স্কুলছাত্রীর বাবা কমেদ মোল্লার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। এই সময় হামলাকারীরা চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে ভিক্ট্রিমের চাচা আব্দুল মালেক মোল্লাকে উপর্যুপরিভাবে কুপিয়ে জখম করে। একই সঙ্গে তারা ভিক্ট্রিমের বাবা ও চাচাতো ভাই কোরবান মোল্লা, জুয়েল রানাকে মারপিট করে তার দোকানে লুটপাট করে। এই বিষয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরও বলেন, থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ আসামী হামলা, লুটপাট ও কুপিয়ে জখম মামলার প্রধান আসামী সিদ্দিক সরদারকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। স্থানীয়ভাবে মিমাংসার শর্তে বাদীর জবানবন্দ্বিতে আসামী সিদ্দিক আদালত থেকে জামিন লাভ করেন।
এরপর উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এলাকায় সমঝোতা প্রক্রিয়া চলাকালে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আসামী লিটন সরদারের স্ত্রী সাদিয়া ইয়াসমিন বাদী হয়ে ভিক্ট্রিম স্কুলছাত্রীর বাবাসহ তার ৮ আত্মীয়ের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যে প্রনোদিত মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু পুলিশ ঘটনার কোনরুপ তদন্ত না করে বাদী সাদিয়া ইয়াসমিনের আত্মীয় পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নির্দেশে ঈশ্বরদী থানার ওসি মামলা রুজু করেছেন। এটা একটি নেক্কার লজ্জ্বা ও দুঃখজন ঘটনা। তাই এই হয়রানিমুলক মিথ্যা মামলা তদন্তের মাধ্যমে প্রতাহারে দাবী জানানো হচ্ছে।
ভিক্ট্রিম স্কুল ছাত্রীর বাবা কমেদ মোল্লা বলেন, আসামীরা আমার স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে আটকিয়ে রেখে কয়েকদিন ধরে ধর্ষণ করেছে। পুলিশ মেয়েটি উদ্ধার করে মেয়ের জবানবন্দ্বি নিয়ে আমার বাড়িতে পাঠিয়েছে। কিন্তু থানা মামলা গ্রহন না করায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। আর এখন আসামীরা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা, লুটপাট, মারপিট ও কুপিয়ে জখম করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকেসহ আত্মীয় স্বজনদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এই অসহায় পিতার।
এদিকে নিকটহাটার বণিক সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন,মামলার বাদি সাদিয়া ইয়াসমিন পরিকল্পিতভাবে নিকড়হাটা বাজারে অন্যের নিকট বিগত ২ বছর আগে ভাড়া দেওয়া দোকানকে নিজের স্বামীর দোকান দাবী করেছেন। এটা খুবই দুঃখ জনক। কারণ দোকানগুলো আশিক বিশ্বাস,আনোয়ার হোসেন ও মজনুর নিকট ভাড়া দিয়েছেন। তারাই দোকানদারী করেন।

ভাড়া নেওয়া দোকানদার আশিক বিশ্বাস,আনোয়ার হোসেন ও মজনু বলেন, বিগত দুই বছর আগে তারা মামলার বাদী সাবিনার স্বামী লিটন সরদারের নিকট থেকে মাসিকভাড়াতে চালাচ্ছেন। তাদের দোকানে হামলা বা লুটপাটের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় বাজার সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন, বয়োবৃদ্ধদ্বয় নুরা মোল্লা, আবু বক্কার মোল্লা, আলিমদ্দি শেখ, মহাবুল বিশ্বাস, আক্তার মোল্লা, বাদশা আলম, আলম সরদার, আলী আকবর, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, আইনুল হোসেন, শিক্ষক আঃ কাদের, বাদশা মোল্লা, কফিল মোল্লা, আজিবার রহমান, আকমল সরদার ও উকিল মোল্লা, আনজেরা বেগম, হাফিয়া বেগমসহ গ্রামের কয়েকশত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
যোগাযোগ করা হলে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার সাবিনা ইয়াসমিনের দায়ের করা মামলাটি একটি কাউন্টার মামলা বলে স্বীকার করে বলেন, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হলে আদালতে মামলার চুড়ান্ত তালিকা থেকে আসামীদের নাম বাদ দেওয়া হবে। তবে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগটি ঈশ্বরদী থানায় কেনো মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হলো না জানতে চাইলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান ওসি।

শেয়ার বাটন