Monday, April 29সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

বিদায়ের পথে হেমন্ত: ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা

মোঃ শাহীন‌উজ্জামান শাহীন, নিজস্ব প্রতিনিধি: বিদায়ের পথে হেমন্ত। ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা আজ নবাবগঞ্জ দোহারে বেড়েছে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে।

বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভোর বেলা কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নবাবগঞ্জের আগলায় গাছিদের রস সংগ্রহের কাজ বেড়েছে।

নবাবগঞ্জের আগলা শাহীন বাড়ি সরেজমিনে দেখা যায়, গাছি এখন রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ গ্রামে প্রায় শতাধিক খেজুর গাছ রয়েছে। শীত এলেই এলাকার গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছ কাটতে।

প্রথমে খেজুর গাছ পরিষ্কার করে উপরের অংশের ডাল পালা কেটেছেন। এরপর ৩-৪দির পর গাছের উপরের অংশ পরিষ্কার করে নতুন করে আবার মাথার অংশ কাটা শুরু হবে। এর ৪/৫দিন পর উপরের সেই অংশ শুকালে পুনরায় আবার গাছের ছাল কেটে হাড়ি পাতা হবে। ধীরে ধীরে ফোটা ফোটা করে রস পড়া শুরু হবে।

এইভাবে রাত গড়িয়ে সকাল হতেই রসে হাড়ি ভরে যাবে এই প্রত্যাশা গাছি ভায়ের। সকালে গাছিরা এসে রস সংগ্রহ করবেন এবং সেই থেকে তৈরি হবে পাটালি ও ঝোলা গুড়।

মহাকবি কায়কোবাদ এর জন্মভূমি আগলার গাছী হোসের (৩৮) বলেন,আমি এ এলাকার সব চেয়ে পুরাতন গাছি। ১০/১২ বছর থেকে এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এখন আমার বয়স হচ্ছে। এলাকার মানুষ আমাকে ছাড়ে না। আমি পদ্মানদীর ওপার থেকে ঢাকায় আসি।

তবে আগের মতো এখন আর কষ্ট করতে মন চায় না। গতবার আসিনাই। এর আগের বছর আমি ৭০/৮০ টি খেজুর কেটে ছিলাম। এবার ৬০/৭০ গাছ কেটেছি। আসতে পৌষ মাস পর্যন্ত আরো গাছ কাটার ইচ্ছা আছে। এখনো গাছে পুরোপুরি রস আসা শুরু হয়নি।

এখন অগ্রহায়ণ মাস প্রায় শেষ। পৌষ মাঘ মাসে শীত বেশি পড়লে রস ভালো হবে। আগে রস সংগ্রহ করে তা থেকে গুড় ও পাটালি তৈরি করেছিলাম। দামও ভালো পেয়েছিলাম। এবার আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করি ভালো রস সংগ্রহ করতে পারব। শীত ভালো পড়লে রসের পরিমাণ বাড়ে। বিশেষ করে ঘন কুয়াশা পড়লে আমাদের গাছে উঠে রস সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়।

আমার রসের পাটালির গুণগত মান ভালো হওয়ায় এলাকায় সুনাম রয়েছে। তাই দূর-দূরান্তের অনেক মানুষ আমাদের বাড়িতে আসে রস ও পাটালি সংগ্রহ করতে।

তিনি আরও জানান,পৌষ মাসের মাঝা মাঝিতে গ্রাম ও শহরে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। এ সময় সাধারণ মানুষ রসের পিঠা বেশি পছন্দ করে। বিশেষ করে রস দিয়ে পিঠা ভিজালে পিঠা ভালো হয়। আর পাটালি দিয়ে পিঠা ভিজালে স্বাদ তেমন ভালো হয় না। তাই রসের পিঠার স্বাদ অত্যন্ত সুস্বাদু।

আরেক গাছি জানান, প্রথমে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনা হয়। এরপর সেই রস বড় হাড়িতে জ্বাল দেওয়া হয় সারাদিন। রস একটু ঘন হয়ে এলে তা উপযুক্ত স্থানে ঢালা হয়। তারপর ৬-৭ ঘণ্টা পর পাটালি তৈরি হয়ে যায়। বাড়ি থেকে সেই পাটালি বিক্রি হয়ে যায়। গতবার ২০০ টাকা দরে পাটালি বিক্রি করা হয়েছিল। পর্যাপ্ত রস ব্যবহার করে সঠিকভাবে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় পাটালি।

নবাবগঞ্জের আগলা বাহ্রা গালিমপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার গাছিরা এখন খেজুর গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ তোলা প্রায় শেষ এখন সপ্তাহ দুয়েক পর তারা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবেন। এলাকার অনেক গাছিরা জানান পৌষ ও মাঘ মাসে গাছে রস বাড়বে।

শেয়ার বাটন