Saturday, May 4সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

সাতক্ষীরা-৪ আসনে মাঠে দৌড়ঝাপ প্রার্থীদের

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে: আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা- ১০৮ শ্যামনগর- কালিগঞ্জ (আংশিক) -৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে আওয়ামী লীগের এস,এম আতাউল হক দোলন এবং বর্তমান আলোচিত দু’টি দল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। নতুন দল (বিএনএম) থেকে মনোনয়ন পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজা এর সঙ্গে দ্বন্দ্ব। আতাউল হক দোলন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দাবি করলেও সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের( বিএন এম) মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে নিজেকে জাহির করা নিয়ে ২ উপজেলার মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কৌতূহল রয়ে গেছে। তবে আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে মহাজোটের আসন বন্টন নিয়ে ভাগা ভাগির সভা পর্যন্ত। সাতক্ষীরা -৪ আসনে ভোট যুদ্ধে মোট ৮ জন প্রার্থী গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও নৌকা, নোঙ্গর, লাঙ্গল ছাড়া অন্য ৪ প্রার্থীকে ভোটাররা চিনেন না। সাতক্ষীরা -৪ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজা এবার ৩ টি নিবন্ধিত দল থেকে পৃথকভাবে মনোনয়ন ক্রয় করে। প্রথমে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা -৪ আসনে প্রতিদ্বন্দিতার লক্ষ্যে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা থেকে মনোনয়নপত্র তোলেন মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য। পরে আলোচিত দু’টি দল তৃণমূল-বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএন এম) থেকে। তবে শেষমেষ তিনি শুধু বি এন এম এর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আলোচিত হয়েছেন। এক সময়কার সাবেক প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএম এরশাদের একান্ত সচিব ঘনিষ্ঠ সহচর খ্যাত সাবেক হুইপ এইচএম গোলাম রেজা প্রেসিডেন্ট এরশাদের বিশ্বস্ত ছিলেন। সেই কারণে তার দয়া সান্নিধ্যে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গঠিত মহাজোটের প্রাথী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেন মোহাম্মদ এরশারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ালে জাতীয় পার্টি থেকে এইচ এম গোলাম রেজাকে বহিষ্কার করে দেন। পরে এইচ এম গোলাম রেজা বিকল্পধারার সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল থেকে কুলা প্রতীকে অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট এরশাদ জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক ওই রাতেই মহাজোটের প্রার্থী পরিবর্তন করে সাতক্ষীরা -৪ আসনের সংসদ সদস্য এস,এম জগলুল হায়দার কে দেওয়া হয়। যে কারণে ঐ নিবাচনে তিনি বিপুল ভোটে পরাজয় বরণ করেন। সেখান থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজার জাতীয় পার্টির রাজনীতির সমাপ্তি ঘটে। এবারও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩ দল থেকে ৩ বার মনোনয়ন পত্র কিনে শেষে বি এন এম তে জমা দিয়ে নিজেকে মহাজোটের অন্যতম শরিক দলের প্রার্থী হিসাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়ে রয়েছেন। তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত, বিএনপি’র ভোট ব্যাংকে এবং ভোটারদের কাছে সমর্থন পেতে গায়েবী মামলা এবং রাজনৈতিক সহিংস মামলায় আর গ্রেপ্তার করা হবে না সবাইকে ঘরের বাহিরে আষাঢ় আহ্বান জানান আমি থাকতে কাউকে আর গ্রেফতার মামলায় জড়ানো যাবে না বলে আশ্বস্ত করার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের ভিতরে নানান আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।কারণ ২০১৩ সালের সেই ভয়াল স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি সাতক্ষীরার মানুষ। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে বিগত নবম সংসদ নির্বাচনেঅংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নিজেকে সৎ, দুর্নীতি মুক্ত দাবি করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে ওই সময় তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালীন ব্যবসায়ী বরুন ঘোষকে ডিও / প্রকল্পের চাউল দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে চাউল না দেওয়া এবং টাকা ফেরত না দেওয়ার ঘটনাটি নিয়ে চলছে নতুন করে আলোচনা সমালোচনা। নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত শিমু- রেজা কলেজের নিয়োগ নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা নিয়োগ দেওয়ার নামে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চলছে নানামুখী আলোচনা। গোলাম রেজা বিষয়টি জানতে পেরে ওই সময় নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় এখন হায় হায় খপ্পরে পড়ে হাবু-ডুবু খাচ্ছে নিয়োগ প্রার্থীরা। কিন্তু ঐ চক্রের নিকট কোন দলিল দস্তাবেজ না থাকায় সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে তাদের এখন মাথায় হাত পড়েছে। এছাড়াও তার কালীগঞ্জের বাসভবনের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড তথ্য নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ জনদের ফাঁস করা গল্প কাহিনী নিয়ে চলছে চায়ের দোকানে মুখরোচক আড্ডা। অন্যদিকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া এস, এম আতাউল হক দোলন এর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক। সেই সুবাদে তিনি একজন আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই হিসাবে তার একটি রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক জামায়াত নেতার পুত্র বধূকে বিবাহের ছবি দিয়ে গোলাম রেজার শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে চলছে নানান জল্পনা, কল্পনা আলোচনা সমালোচনার ঝড়। তবে ভোটের ময়দানে জোটের মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা এবং নোঙ্গরের মধ্যে যে লড়াই হবে সেটা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এক সময় কালিগঞ্জ- শ্যামনগর এলাকাকে জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসাবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকায় দলটির আর আগের মত জৌলুস নাই। তারপরও সেই দুর্গ খ্যাত শ্যামনগর -কালিগঞ্জ (আংশিক) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান এবার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধের মাঠে এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলেছে। একজন সৎ নিরহংকারী মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে তিনিও পিছিয়ে থাকবেন না বললে আশাবাদী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেত্রী মাসুদা খানম মেধা দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। বাকি ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ ভোটারদের মাঝে কোন পরিচিতি নাই বলে জানা গেছে। এই ৪জনের মধ্যে তৃণমূল বিএনপি’র আসলাম আল মেহেদী কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও ছাত্র জীবন থেকে তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়ে এলাকায় আবির্ভাব ঘটেছে বলে ভোটাররা জানান। অনুরূপ বাংলাদেশ কংগ্রেসের শফিকুল ইসলাম প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তবে তাকে এলাকার মানুষ কেউ চিনেন না বলে জানা যায়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) একরামুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মিজানুর রহমান নামে একজন মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও তাদেরকে কেউ চিনেন না বলে সাধারণ ভোটারদের মাধ্যমে জানা গেছে।

শেয়ার বাটন