Thursday, April 25সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

উবারের দাবি, তাদের সেবায় নারী ‘নিরাপদ’

হাফিজুর রহমান, ঢাকা থেকেঃ গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করা হয়েছে, নারীদের যাতায়াত নিরাপদ করেছে এই সেবা। ৯৬ শতাংশ নারী যাত্রী জানিয়েছেন, উবার বেছে নেয়ার কারণই ছিল নিরাপত্তা। গবেষণায় অংশ নেয়া ৭২ শতাংশ নারী যাত্রী জানিয়েছেন, রাতে দেরি করে বাড়ি পৌঁছানো এখন আগের তুলনায় সহজ।

নারীদের একা যাতায়াতে নিরাপত্তার যে সংকট, তার অনেকটাই দূর করার দাবি করছে অ্যাপভিত্তিক গাড়ি ভাড়ার সেবা উবার। প্রতি ১০০ নারী যাত্রীর মধ্যে ৯৬ জনই এই সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেছেন বলে উবারের নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে।

এতে এসেছে, যাত্রীরা সহজে গাড়ি ভাড়া করতে পারে বলে গন্তব্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পৌনে ২ কোটি ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হয়েছে। অন্যদিকে চালকরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা এক বছরে বাড়তি আয় করেছেন ৫০ কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে এই সেবা কেবল ২০২১ সালেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করেছে।
রোববার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়েছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উবারের প্রভাব খুঁজে দেখতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাবলিক ফার্স্টকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই গবেষণার ফলাফল জানাতেই গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
উবার কীভাবে যাত্রী, সমাজ ও অর্থনীতির পরিবর্তনে সাহায্য করেছে, সে বিষয়টি উঠে এসেছে গবেষণায়।

গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করা হয়েছে, নারীদের যাতায়াত নিরাপদ করেছে এই সেবা। ৯৬ শতাংশ নারী যাত্রী জানিয়েছেন, উবার বেছে নেয়ার কারণই ছিল নিরাপত্তা। গবেষণায় অংশ নেয়া ৭২ শতাংশ নারী যাত্রী জানিয়েছেন, রাতে দেরি করে বাড়ি পৌঁছানো এখন আগের তুলনায় সহজ।উবারের সেবা চালু হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ গাড়ি না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সেবার কারণে বছরে যাত্রীদের সময় সাশ্রয় হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ঘণ্টা।

উবারে যারা গাড়ি চালান, তাদের ৭৩ শতাংশও উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, এই অ্যাপে গাড়ি চালিয়ে তারা অতিরিক্ত ৫২ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেছেন, যা তাদের বিকল্প কাজের উৎসের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।২০১৬ সালে রাজধানীতে অ্যাপভিত্তিক গাড়ি ভাড়ার সেবা উবার চালু হয়। এটি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যেটি বাংলাদেশে সাধারণ যাত্রীদের গাড়ি ভাড়া করার বিড়ম্বনা কমিয়েছে।

অ্যাপে গন্তব্য দেখে কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া, যাত্রীর অবস্থানের কাছে এসে তার ইচ্ছামতো গন্তব্যে যাওয়ার কারণে সেবাটি জনপ্রিয় হয়। এরপর গাড়ি ভাড়ার পাশাপাশি উবার নিয়ে আসে বাইক সেবা, এরপর আসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়ার ব্যবস্থা।

শুরুতে কেবল রাজধানীতে হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জেলাতেই সেবাটি আছে। নির্দিষ্ট শহরের পাশাপাশি এখন উবারে গাড়ি ভাড়া করা যায় এক জেলা থেকে আরেক জেলাতেও।

তবে শুরুর দিকে চালকরা যাত্রীদের যে সেবা দিত, তার মান এখন পড়ে গেছে বলে অনেক অভিযোগ আসছে। যাত্রীর ইচ্ছামতো গন্তব্যে না যাওয়া, রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে ঝুলিয়ে রাখা, অতিরিক্ত বিল আসার মতো বিষয়গুলো যাত্রীদের বিরক্ত করছে।

এসব সমস্যা প্রতিকারের তেমন কোনো সুযোগও রাখা হয়নি। যাত্রীর সমস্যা জানাতে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি রাখা হয়নি, যদিও আইনে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা আছে। এমনকি গণমাধ্যমও উবারের বক্তব্য জানতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছে।

ব্যক্তিগত গাড়ি নেই এমন ৮৪ শতাংশ যাত্রী বলেছেন উবার থাকায় তারা নিজেদের গাড়ি না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গবেষণা তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, সেই লক্ষ্য অর্জনে উবারের মতো আরও ব্র্যান্ড আমাদের উন্নয়নের অংশীদার হবে।’

উবারের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাবলিক পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মাইক অরগিল বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সুযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে উবার। কিন্তু আমাদের অবদানের ব্যাপ্তি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চালক, যাত্রী ও অর্থনীতির ওপর অবদানের সার্বিক প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি।

‘এর মাধ্যমে আরও তুলে ধরা হয়েছে, যাতায়াতের উন্নত ব্যবস্থা কীভাবে মানুষকে নিরাপদে চলার সুযোগ করে দেয় এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের সমাজের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রযুক্তি ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হয়।’

শেয়ার বাটন