Thursday, May 2সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

ইউপি চেয়ারম্যান জাকির গাড়ি ব্যবসার নামে প্রতারণার আরো ২০টি মাইক্রোবাস উদ্ধার

হাসানুজ্জামান সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: গাড়ি ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের দেয়া তথ্যে আরো ২০টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ।
গ্রেফতারকৃত মোঃ জাকির হোসেন কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার ২নং মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। সকাল ১১:৩০ ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন , গত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ রাজধানীর মুগদা থানায় একটি প্রতারণার মামলা রুজু হয়। মামলাটি গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জাকির চেয়ারম্যান পোর্ট থেকে স্বল্প দামে গাড়ি ক্রয় করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেয়। পরে ক্রয়কৃত গাড়ি রেন্ট-এ কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় পরিচালনা করার জন্য চুক্তি করে। সে একই গাড়ির বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির সাথে ভুয়া কাগজপত্র দ্বারা চুক্তি সম্পাদন করে। তাছাড়া একই রেজিস্ট্রিশন নম্বর সম্বলিত গাড়ি একাধিক ব্যক্তির নিকট জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রয় করতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর দিয়ে গাড়ি বিক্রির চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। গাড়িটি নিজেই ভাড়া নিয়ে মাসিক ভাড়া পরিশোধের ভিত্তিতে পরিচলনা করার কথা বলে কিছুদিন ভাড়া পরিশোধ করে। পরবর্তীতে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয় ও গাড়ি ক্রয়ের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও পূর্বের বিক্রয়কৃত গাড়ী স্বল্প মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়েও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম। এসময় তার হেফাজত হতে ২টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। পরে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আত্মসাৎকৃত আরো ২০টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সর্ম্পকে ডিবি প্রধান বলেন, প্রতারক জাকির প্রতারণার মাধ্যমে ৬০-৭০ টি গাড়ি দেখিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ৬০০-৭০০ জনের সাথে প্রতারণা করেছেন। যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারের এমপি রয়েছেন। একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেখিয়ে ৩৭ জনের নিকট স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত জাকির ৫-৬ জনের সহযোগীর সহায়তায় সে প্রতারণা করতো। সে আনুমানিক হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুরে একটি গ্রামে লোকদের কাছে ১২২ টি গাড়ি বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করেছেন। জাকির হোসেন তার প্রতিষ্ঠান আর. কে. মটরস এর নামে এবং তার আত্মীয় স্বজনের নামে ২৭ টি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। তার নামে বিভিন্ন থানায় ১২ টি প্রতারণার মামলাও রয়েছে।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় লোভের বশবর্তী হয়ে এধরণের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতে সাধারণ মানুষকে নিষেধ করেণ ডিবি প্রধান। গাড়ি বা জমি কেনার পূর্বে কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করার অনুরোধ করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ গোলাম সবুর, পিপিএম-সেবা এর নির্দেশনায় অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এবং তেজগাঁও জোনাল টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাদত হোসেন সুমা, বিপিএম এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।

শেয়ার বাটন