Wednesday, May 1সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

বইমেলার ডিএমপি পুলিশের বুক স্টল থেকে ঘুরে আসুন

হাসানুজ্জামান সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে অমর একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী চলবে এ বইমেলা। সাহিত্য প্রেমীদের এই মেলায় পিছিয়ে নেই পুলিশও। শত ব্যস্ততার মাঝেও সাহিত্য চর্চা করছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন লেখকদের মননশীল বই পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে বই মেলায় এবারো রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বুক স্টল।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই মাঠের উত্তর দিকের সারিতে মনোরম পরিবেশে বুক স্টলটি অবস্থিত। বুক স্টলে বইপ্রেমী পাঠকদের জন্য সুবিন্যাস করে রাখা আছে বিভিন্ন পুলিশ লেখকদের গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও ছড়ার জনপ্রিয় বইসমূহ।
ডিএমপির বুক স্টল-এ পুলিশ লেখকদের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, পুলিশ সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ পুলিশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার রচিত একাধিক বই। এবারের বইমেলায় তাঁর নতুন দুইটি বই পাঞ্জেরী প্রকাশনীর মাধ্যমে বের হয়েছে। বই দুটি হলো-কারাগার থেকে লেখা বঙ্গবন্ধুর পত্রাবলী নিয়ে সম্পাদিত বই ‘শেখ মুজিবের চিঠি’ ২য় খন্ড এবং এর ইংরেজি সংস্করণ ‘Letters of Sheikh Mujib’ ২য় খন্ড।
এছাড়াও, তাঁর রচিত মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ ‘ঠার:বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’। বইটি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত ঠার ভাষা নিয়ে রচিত গ্রন্থ। তাঁর এই গ্রন্থটিতে দেশের বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষার উদ্ভব আলোচনা, ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় ও বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। যেন বিপন্ন এই জাতীয় বিলুপ্ত প্রায় ভাষাটি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ও যৌক্তিক ধারণা পাওয়া যায়। তাঁর রচিত অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘চিঠিপত্র: শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং এর ইংরেজি সংস্করণ ‘Letters of Sheikh Mujibur Rahman’ ১ম খন্ড; ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’; ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’; ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা ১ম খন্ড, ২য় খন্ড ও ৩য় খন্ড’ এবং ‘Speeches of Sheikh Hasina’।
এবারের বই মেলায় বাংলাদেশ পুলিশের জনপ্রিয় লেখক পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্যের রচিত নতুন বই ‘অনলশিখায় কি করিনু খেলা’ তাম্রলিপি প্রকাশনীর মাধ্যমে বের হয়েছে। এই লেখকের অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘তারা ভালোবেসেছিল’; ‘মনে মেঘের ছায়া’ ও ‘জননী জন্মভূমি’।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বিপিএম, পিপিএম (বার) এই সময়ের সুপরিচিত পুলিশ লেখকের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক। এবারের বইমেলায় অনিন্দ্য প্রকাশনীর ব্যানারে তাঁর চারটি উপন্যাস বের হয়েছে। উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে, সায়েন্স ফিকশনের উপন্যাস ‘দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড’, ভৌতিক থ্রিলারের উপন্যাস ‘মৃত্যুবাড়ি’, প্যারাসাইকোলজি থ্রিলারের উপন্যাস ‘হারানো জোছনার সুর’ ও গোয়েন্দা থ্রিলারের উপন্যাস ‘রুপার সিন্দুক’। বইমেলায় ছোট বড় মিলিয়ে এ লেখকের প্রায় ১০২টি বই রয়েছে।
এছাড়াও, বইমেলায় অন্যান্য পুলিশ লেখকদের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম রচিত গ্রন্থ ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি’; অতিরিক্ত আইজিপি (অবঃ) ফাতেমা বেগমের-‘আমার আনন্দ আমার জগৎ’; পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি মোঃ তওফিক মাহবুব চৌধুরীর মানুষের কথা বিশ্লেষণ করে সত্য-মিথ্যা বের করার পদ্ধতি নিয়ে রচিত বই-‘আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ’; স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত ডিআইজি আবিদা সুলতানার-সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই ‘শহীদ পুলিশের রক্তের ঋণ’; ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (হেডকোয়ার্টার্স) সাইফুল্লাহ আল মামুন বিপিএম, পিপিএম-বার এর ‘আমি হব পুলিশ’ ও ‘টাক জয়ের টাটকা গল্প’; ট্রাফিক-রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো. জয়নুল আবেদীনের রচিত বই-‘বঙ্গবন্ধু ও গল্পবাস প্রবন্ধ’, ‘মনকবি মিউজিক’ ও ‘ছায়ামানুষ’; ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদরদপ্তর ও প্রশাসন) মোঃ তানভীর সালেহীন ইমন পিপিএম এর ‘বঙ্গবন্ধু ও বহির্বিশ্ব’; পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পীর রচিত-‘রক্তধারায় বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধু একটি দর্শন ও বাংলাদেশ’ এবং ‘রাজারবাগে প্রজার পুলিশ’ বইসহ ৯টি বই; পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদের এবারের বইমেলায় অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই ‘জনতার মত বিধাতার পথ’; শামীমা বেগমের-‘জীবন স্তব্ধ জেগে ওঠে শব্দ’ ‘জীবনবৃত্ত’, ‘ভালোবাসার অনুকাব্য ১,২,৩’ ও ‘রঙতুলিতে গল্প কথা’ বইসহ মোট ১১টি বই; অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের হোসেন সিদ্দিকীর সায়েন্স ফিকশন নিয়ে লেখা বই-‘মহাবিস্ফোরণ ও সময়ের ভুল হিসাব’ সহ তিনটি বই; ওয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ জানে আলম মুন্সির পাঞ্জেরী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ছড়ার বই ‘ডাংগুলি’ সহ মোট চারটি বই; পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসিন পিপিএম-এর বই-‘হ্যালো পুলিশ স্টেশন’; এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মঈন খানের সপ্তডিঙ্গা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই-‘পুলিশের খোলা ডায়ারি’।
মোঃ নূরুল আনোয়ারের-‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ পুলিশের সাতকাহন’; ইরানী বিশ্বাসের-‘একাত্তরের পুনর্জন্ম’; আহমেদ আমিন চৌধুরীর রচিত বই-‘ বাংলাদেশ পুলিশ উত্তরাধিকার ও ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘নামিবিয়ার স্বাধীনতায়’ সহ মোট ৯টি বই; মোঃ আব্দুল আওয়ালের লেখা ‘নীল চাঁদোয়া’ ও ‘স্বপ্নীল সুখ’; জিয়াউল সরকারের-‘কলি কালের কিংবদন্তি’; আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর বই-‘আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ নবীশ থেকে পেশাদার’; শাওন আসগরের লেখা-‘না ভালোবাসা না মৃত্যু’ ও ‘দহন’ সহ মোট ৫টি বই; সৈয়দ রনোর-‘জীবনবোধের নামতা’ সহ মোট ৩টি বই; ফারিয়া আফরোজের লেখা বই-‘কঙ্গোর ডায়রি’; বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বই দিশারি; মোঃ আলমগীর হোসেনের-‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা’; মোঃ সাইফুল ইসলামের বই-‘মুক্তিযুদ্ধ ও ভোলা পুলিশ’; পারভেজ এলাহী চৌধুরীর ’৭১ এর প্রতিধ্বানি; ডিএমপির সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক কামরুল হাসান মামুনের স্বপ্নের অনুভূতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই-‘ভালো থাকুক ভালোবাসা; ডিএমপির সিভিল স্টাফ মোহাম্মদ অংকনের রৌদ্রছায়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কিশোর গোয়েন্দা কাহিনী নিয়ে লেখা বই -‘গুল্টু গোয়েন্দা’ এছাড়াও বইমেলায় তার লেখা আরো তিনটি বই রয়েছে।
বুক স্টলে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ডিএমপি নিউজকে জানায়, বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে গড়ে প্রায় সহস্রাধিক দর্শনার্থী প্রতিদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই বুক স্টলটি পরিদর্শন করেন।
তারা আরো জানায়, বইপ্রেমীরা সবাই তাদের চাহিদা মতো বিভিন্ন লেখকের বই পেয়ে দারুন খুশি। বইমেলায় পুলিশের বুক স্টল স্থাপন করায় ডিএমপির এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। তারা মনে করেন এটি পুলিশের একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ যার মাধ্যমে পুলিশ জনগণের আরো কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে।
পছন্দের বইগুলো আপনার সংগ্রহে রাখার জন্য বইমেলা চলাকালীন যে কোন সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বুক স্টল থেকে ঘুরে আসুন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে আয়োজিত মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ এর শুভ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বইমেলা উদ্বোধন শেষে ডিএমপির বুক স্টল পরিদর্শন করেন।

শেয়ার বাটন