Thursday, May 2সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

পেয়ারা চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছে পাবনার মহাবুল

তুহিন হোসেন, পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে ১৫ বছর ধরে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পেয়ারা চাষ করে জাদুকরি সাফল্য পাওয়ার স্বপ্ন বুনছে চাষীরা। বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় পেঁয়ারা চাষে আগ্রহী হয়েছে অনেকে। এ উপজেলার মাটি সব ফসলের জন্য উপযোগী। উদ্দোমী পেয়ারা চাষী মাহাবুল পেঁয়ারা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছে ।২০১৩ সালে পেঁয়ারা চাষ শুরু করে, বিনিয়োগ করেন সাত লাখ টাকা। তারপর থেকে সিদ্ধান্ত নেন পেয়ারা চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন। বাড়াতে শুরু করেন পেয়ারা বাগানের পরিধি। বছরে ২৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করবেন এমনটাই আশা করছেন মাহাবুল। ১৩ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করে তিনি এখন সবার কাছে আলোচনার পাত্র।
শুধু বাগানই নয়, ভিটামিন-খনিজ উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের পুষ্টিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন কর্মসংস্থান। প্রতিদিন গড়ে ৮/১০ জন মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তিনি। এছাড়া তার বাগানের পেয়ারা পাবনা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে রাজশাহী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সফল উদ্যোক্তা পেয়ারাচাষী মাহবুলের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগরের বাবুপাড়াতে। ছোট থেকেই তিনি বিভিন্ন ব্যবসাতে জড়িত ছিলেন ব্যবসায়ের পরিবর্তন ঘটিয়ে পেয়ারা চাষসহ খন্ডকালীন সবজি চাষ শুরু করেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পেয়ারা তাকে দেখিয়েছে সফলতার হাতছানি তাই এখন পেয়ারাই তার ধ্যান-জ্ঞান।
জানা যায়, উপজেলার বড়ইচারা দক্ষিণপাড়া ও সাহাপুর নামক স্থানে ১৩ বিঘা জমি জুড়ে পেয়ারা বাগান চাষ করে। তিনি এখন উপজেলার প্রায় ব্যবসায়ীর কাছে পাইকারী পেয়ারা বিক্রয় করেন। এমনিতেই ঈশ্বরদী ফল ও সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ঈশ্বরদীর অসংখ্য ফল ও সবজি উৎপাদক সারা দেশে নন্দিত হয়েছেন ইতোপূর্বে। তাদের উৎপাদনের ক্ষেত্র কখনো একটা মাত্র ফলে সীমিত থাকেনি। প্রত্যেকেই রকমারি ফল উৎপাদন করেন, ব্যতিক্রম শুধু মাহাবুল । তার ক্ষেত্র শুধুই পেয়ারা। তিনি থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ করেন প্রতি বিঘায় ১০০টি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের বার্ষিক ফলন এক মণের কাছাকাছি। বারো মাস ফলন পাওয়া গেলেও পেয়ারার মৌসুম মূলত আশ্বিন থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস। তবে উচ্চ মূল্য ও সময় হিসেবে পৌষ ও মাঘ মাসসহ অগ্রহায়ণ ও ফালগুনের অর্ধেকটা সময় ব্যবসায়ীদের কাছে পেয়ারা বাজারজাতকরণের কাঙ্খিত সময়। সে অন্যের জমি খাজনা নিয়ে বাগান করেছে, প্রতি বিঘাতে খরচ হয়েছে প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা।
মাটিতে কলম রোপনের ১৩ মাস পর থেকে বেশী ফলন ও তবে ৮ মাস থেকে অল্প ফলন পাওয়া যায়। বাগান থেকে তিন সাইজের পেয়ারা ২০০০, ১৮০০ ও ১২০০ টাকা মণ বিক্রি করছে । পেয়ারা গাছগুলো সাধারনত তিন বছর ফল দেয়।
মাহাবুল বলেন, এবার বাগান চাষ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। আগে আমি সবজি চাষ করতাম, আমাদের উপজেলার সফল চাষী কুল ময়েজের মাধ্যমে পেয়ারা চাষে আমি উদ্বুদ্ধ হই। তবে কৃষি অফিসের সহায়তা, পরামর্শ পেলে রোগবালাই দূর হবে ও ফলন বাড়বে এমনটাই প্রত্যাশা। বাগানের পেয়ারাতে নতুন রোগ দেখা দিয়েছে কি রোগ জানেনা মাহাবুল এনিয়ে দুশ্চিন্তায় ভূগছে, এ রোগ দূর করার জন্য কৃষি অফিসারদের সুদৃষ্টি কামনা করেন । মাহাবুল আরো বলেন আমি ট্রেনস এগ্রো লিমিটেড কীটনাশক কোম্পানীর প্রতিনিধিনিধিদের সহযোগীতা নিয়ে কাজ করছি, তাতে বিভিন্ন রোগবালাই দূর করতে পারছি।।
বাগানে কাজ করা শ্রমিকরা বলেন, আমরা পেয়ারার বাগানে কাজ করি। আমরা এখানে ৮/১০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছি। সবার সংসারে উন্নতি আসছে এবং সবাই ভালোমতো চলতে পারছি। আমরা বাগানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পাই। আমাদের এখানে প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বাগানে কাজ করি।
উপজেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার মিতা রানী সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ চলছে ১৫ বছর। বর্তমানে পেয়ারা চাষ অধিক লাভবান হওয়ায় এবছর বছর ৪০০ হেক্টর জমিতে থাই-৩সহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারা চাষ হচ্ছে। যা গত বছরগুলোর তুলনায় এবার বেশি। পেয়ারাতে ব্যাগিংমাস্ক রোগ হচ্ছে। এসব রোগবালাই দূর করতে আমরা চাষীদের সচেতন করতেছি। ব্যাগিং ছাড়া পেয়ারা চাষ করতে নিরুৎসাহী করছি। আমরা সব সময় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি চাষাবাদের জন্য ।

শেয়ার বাটন