Sunday, April 28সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

নবাবগঞ্জে চালের ব্রাণ ও বিষাক্ত রং মিশ্রিত হলুদগুড়া-মরিচগুড়া

মোঃ জুলহাজুল কবীর নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর: বিষাক্ত রং ও চালের ব্রাণ, কাঠের গুড়া মিশ্রিত ভেজাল হলুদ-মরিচের গুঁড়ায় সয়লাব দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার হাটবাজার। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের লোভে এ ভেজাল গুঁড়া আমদানি করে বাজারজাত করছে। আবার স্থানীয় কিছু মিল মালিক লোকচক্ষুর আড়ালে ভেজাল মিশ্রিত হলুদ ও মরিচের গুড়া তৈরী করে স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে কমদামে বিক্রি করছে। প্রশাসনেরর তদারকি না থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরসহ উপজেলার হাট বাজারে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব ভেজাল গুঁড়া আমদানি করেন। তারা ওই সব ভেজাল গুঁড়া তুলনামুলক কম দামে উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় হাটবাজারসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিভিন্ন পাইকার ও দোকানীদের কাছে বিক্রি করেন। এতে খুব সহজেই প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে এসব ভেজাল হলুদ ও মরিচের গুঁড়া।

বাজার ঘুরে দেখা যায়,‘ ভেজালমুক্ত কেজি প্রতি হলুদ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা । সেখানে ভেজাল হলুদের গুঁড়া পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা খুরচা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা ।

অপরদিকে ভেজালমুক্ত প্রতি কেজি মরিচের গুঁড়া পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা দামে। যা খুরচা বিক্রি হচ্ছে ৫শ ২০টাকা থেকে ৬শ টাকা দামে। আর ভেজাল মরিচের গুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা থেকে ৩শ ৬০ টাকা দামে। দামে কম হওয়ায় সাধারন ক্রেতারা চোখ বন্ধ করে এসব ভেজাল গুঁড়া কিনছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য মতে, উপজেলার দাউদপুর বাজারের মোকলেছার পিতা মকবুল, আব্দুল মালেক, পিতা -অজ্ঞাত, আব্দুল লতিফ, পিতা- অজ্ঞাতসহ একাধিক অসাধু মিল মালিক ও ব্যবসায়ী নিজের মেশিনে ভেজাল কারবার করেন এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে ভেজাল হলুদ-মরিচের গুঁড়া আমদানি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মজুদ করে বিশেষ ভাবে প্রক্রিয়াজাত করে পাইকারী বিক্রি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। উপজেলায় প্রতি মাসে প্রায় ১শ মন ভেজাল হলুদ মরিচের গুঁড়া আমদানি করা হয়। এ আমদানির বেশীরভাগ মজুদ করেন মোঃ সুমন মিয়া, পিতা শামসুল ইসলাম দাউদপুর বাজার, নবাবগঞ্জ। এছাড়াও স্থানীয় মিল মালিকেরা আধা পাকা ও নষ্ট কাঁচা মরিচ সাথে কাঠের গুড়া শুকিয়ে গুঁড়া করেন। ঝাল বৃদ্ধির জন্য ১৫কেজি গুঁড়ার সাথে ১কেজি কারেন্ট মরিচ বা ত্যাজা মরিচের গুঁড়া মিশানো হয়। চকচকে করার জন্য মিশানো হয় বিষাক্ত রং। অপরদিকে হলুদের গুঁড়ার সাথে মিশানো হয় চালের গুড়া, কাঠের গুড়া ও বিষাক্ত রং।

সরেজমিনে উপজেলার দাউদপুর বাজারের ভেজাল হলুদ-মরিচের গুড়া পাইকারী বিক্রেতা ও মিল মালিক মোকলেছারের মিল সংলগ্ন দোকানে গিয়ে দেখা যায় বিরামপুর থেকে আমদানি করা তিন বস্তা (১৫০ কেজি) ভেজাল হলুদের গুঁড়ার। বিশেষ মাধ্যমে এ ভেজাল গুঁড়া আনা হয়। ওই ভেজাল গুঁড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানী মোকছেদ আলী বলেন,‘এতে কোন ভেজাল নাই। আসল হলুদ গুঁড়া ২০০ টাকা বিক্রি হলে এটা কিভাবে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয় এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদত্তোর দিতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন,‘ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের জন্য ভোক্তাদের কাছে ভেজাল বিক্রি করছেন। ভোক্তারাও না বুঝে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।

অপরদিকে সচতেন মহল বলছেন, এসব ভেজাল গুঁড়ায় মিশানো বিষাক্ত রং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রশাসনের নিবরতায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ভেজাল বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার দাবি তাদের।

এবিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মোছাঃ মমতাজ বেগম জানান, কারা ভেজাল করছে, আপনারা চিহ্নিত করে রাখেন। আমাদের ভেজাল বিরোধী অভিযান চলমান আছে। এসকল ভজালকারীকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করব।

শেয়ার বাটন