Friday, May 3সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

কালীগঞ্জে ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও নিষিদ্ধ টায়ারের গুড়া

হাফিজুর রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধি: কোন প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একেবারেই গ্রামের ভিতরে জনবসতি বহুল ও কৃষি জমি এলাকায় বিজিবি (বর্ডার গার্ড) ক্যাম্প সংলগ্ন গড়ে উঠেছে পরিবেশ ছাড় পত্র ছাড়াই অবৈধ ব্রাদার্স ব্রিকস নামের ইটের ভাটা। উক্ত ভাটার মালিক উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও একাধিক সহিংস মামলার আসামি আব্দুল ওয়াদুদ, আব্দুস সেলিম ওরফে বাবলু, শামসুল আলম কয়েশ সহ সহ ৩ ভাই মিলে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে লিজ দিয়ে ভাই ভাই অর্থাৎ ব্রাদার্স ব্রিকস থেকে এখন সিয়াম ব্রিকস এর নামে চালানো হচ্ছে।

উক্ত ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ এবং পরিবেশ নিষিদ্ধ টায়ারের গুঁড়া। বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার শীতলপুর, গণপতি, বসন্তপুর, সনকা, চরদহ গ্রামের জনসাধারণের জীবন বাঁচাতে এবং কৃষি জমি, চলাচলের রাস্তা রক্ষার্থে বছরের পর বছর জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ভাটা বন্ধের দাবিতে অভিযোগ, প্রতিকার চেয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্তের নামে সাপ, লুডু খেলার মত তদন্তের নামে নগদ নারায়ণে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফাইল বন্ধি হয়ে পড়ে আছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বেলা ১টার সময় সাতক্ষীরার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল আমিনের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলার সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম পুলিশ সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ব্রাদার্স ব্রিকস বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অবৈধভাবে ভাটা পরিচালনা না করার মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পায়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পরে আবারও কর্মকান্ড শুরু করে।

এর আগে উক্ত ভাটায় কোন প্রকার কাগজপত্র পরিবেশ ছাড়পত্রের কোন অনুমতি না থাকায় সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার শীতলপুর গ্রামের মৃত এলাহি বক্স এর পুত্র মেসাস ব্রাদার্স ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদের নামে গত ১২/২/২০২০ ই; তারিখে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫( সংশোধিত ২০১০) এবং ১২(৪) ২( ঙ্) এবং ১৫ (১)৯ এবং ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩( সংশোধিত ২০১৯) ১৪ ধারায় কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২২। উক্ত মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম গত ২৫/১/২০২২ ইং তারিখে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে ভাটা মালিক আব্দুল ওয়াদুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র নং ১৫। বর্তমান মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে।

এ ছাড়াও এলাকাবাসীর পক্ষে শীতলপুর গ্রামের মৃত জোবেদ আলী গাজীর পুত্র নুরুল ইসলাম গাজী, ভাটা বন্ধের দাবিতে বাদী হয়ে গত ৩০-১২- ২০২০ ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। উক্ত রিটের প্রেক্ষিতে গত ২/১ /২০২১ ইং তারিখে হাইকোর্ট ডিভিশনের মহামান্য বিচারপতি ফারহা মাহবুব এবং বিচারপতি এস,এম মনিরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে পরিবেশ অধিদপ্তরের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার পরিচালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কালিগঞ্জকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দাখিলের জন্য রুল জারি করেন। রুল শেষে ভাটা বন্ধ ঘোষণা করায় ধুরন্ধর ভাটা মালিক আব্দুল ওয়াদুদ এবং তার ২ সহোদার আব্দুস সেলিম এবং শামসুল আলম কয়েস মিলে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গণপতি গ্রামের মৃত আলহাজ্ব আব্দুস সামাদের পুত্র সৌদি প্রবাসী আব্দুস সবুর ও তার স্ত্রী রুমা খাতুনের নামে বছরে ২৫ লক্ষ টাকা চুক্তিতে ২ বছরের অগ্রিম অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে ইজারা প্রদান করেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। বর্তমান সৌদি প্রবাসী আব্দুস সবুর তার স্ত্রী রুমা খাতুনকে দিয়ে তার পুত্র সিয়ামের নামে অবৈধ ভাঁটাটির নামকরণ করে পুরাদমে ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এখন ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য লোক দেখানো কয়লার স্তুপ রেখে হাজার হাজার মন কাঠ স্তুপ করা হয়েছে। এবং পাশের একটি গোপন গুদামে জ্বালানি ও পরিবেশ নিষিদ্ধ টায়ারের গুড়ার বস্তা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। যা দেখে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্ট ডিভিশন এর অ্যাডভোকেট মনজুর মুর্শিদের দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ অপসারণের জন্য সকল জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগ।

এমনিতে উক্ত ভাটাটি জনবসতি এলাকায় হওয়ায় এলাকায় কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় সর্দি কাশি জ্বর অ্যাজমা সহ প্রায় রোগ বালাই লেগে থাকা ছাড়া এবং কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভাটার কাজে ব্যবহৃত অবৈধ ট্রলি, ট্রাক্টর এবং ট্রাক, ড্রাম্পার বালু টানা, মাটি টানার কাজে ব্যবহার হয়। যে কারণে রাস্তাগুলো নির্মাণ না হতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু বর্ষা হলেই পিচ্ছিল রাস্তার মাটিতে পড়ে অনেকে নিহত আহত ও পঙ্গুত্বের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে । এলাকায় ধুলাবালি এবং কালো ধোঁয়ায় জীবন ধারণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

শেয়ার বাটন