Friday, April 26সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

আশাশুনির নাংলায় জমি জবরদখলকে কেন্দ্র করে হামলায় উভয় পক্ষের আহত-২০

আশাশুনি প্রতিনিধি : আশাশুনির নাংলায় জমি জবরদখল কেন্দ্রিক প্রতিপক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় উভয় পক্ষের শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। মৎস্য ঘেরের বাসা জালানো, ঘের সংলগ্ন বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও মধ্যযুগীয় কায়দায় মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ একসরা নাংলা গ্রামে। সরেজমিন ঘুরে ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের রাঙ্গা গাজীর পুত্র আব্দুল্লাহ গংদের সাথে রুপচাঁদ গাজীর পুত্র রজব আলী গংদের দীর্ঘ ৪৮/৫০ বছর দক্ষিণ একসরা মৌজায় ১০ বিঘাধিক জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে আইন আদালত ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সালিশ বৈঠক করেও সুষ্ঠ সমাধান হয়নি। সম্প্রতি ঝগড়া বিবাদ নিরসনে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস উভয় পক্ষকে নিয়ে বিরোধ এড়াতে আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে অর্ধেক করে জমি ভোগ দখল করার জন্য মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত দেন। এরই মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল রোববার সহকারি জজ আদালত, আশাশুনি, সাতক্ষীরা আবদুল্লাহ গংদের পক্ষে রায় ও ডিগ্রী প্রদান করেন। জানাগেছে, বিরোধপূর্ন জমির আব্দুল্লাহ গংরা ৭ বিঘা ও রজব আলী গংরা ৩ বিঘা জমি দীর্ঘদিন ধান্য ও মৎস্য চাষ করে ভোগ দখল করে আসছেন। রজব আলী গংরা ওই ৩ বিঘা জমি সহ প্রায় ৩০ বিঘা জমির মৎস্য ঘের ও বসত বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন। তাদের পরিবারের অধিকাংশ পুরুষ লোক ধান কাটা ও ভাটায় শ্রমিকের কাজে বাইরে যাওয়ার সুযোগে বৃহস্পতিবার ওই সময় স্থানীয় হাবিবুর রহমান মেম্বর ও আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন দা, শাবল, কুড়াল, লাটিসোটা ও বস্তা ভর্তি ইট পাটকেলসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রথমে রজব আলী গংদের মৎস্য ঘেরে হামলা চালায়। ঘেরের বাসা ভাঙচুর, মাছ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট এবং ঘেরের বাসা আগুনে পুড়িয়ে ভূষ্মিভূত করে দেয়। পরে ত্রাশ সৃষ্টি করে ঘের সংলগ্ন বসত বাড়িতে দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী ভাঙচুর, লুটপাট ও নারী শিশুসহ বাড়িতে থাকা অন্যান্য পুরুষদের কুপিয়ে ও মারপিট করে রক্তাক্ত জখন করে। এতে রজব আলী (৫৫), নজরুল (৩৫), সোলেমান (৩০), শাহিনুর আলম (৩২), ইয়াসিন (২৬), রোজিনা (২৪), রহিমা (২৬), সাগর (১৮), রেশমা (২০), ময়না খাতুন (২৬), সায়েরা খাতুন (২৭) ও ৯ মাসের শিশু জাকিয়া সহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। এ খবরে আশাশুনি থানা পুলিশ দূর্গম এলাকা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছত্রভঙ্গ করে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তবে কাউকে আটক করেননি। আহতদের পার্শ্ববর্তী জায়গীরমহল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত নজরুল, রজব আলী ও সোলেমান গাজীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে আহতদের পরিবার সূত্রে জানাগেছে। আহতদের বসত বাড়ির দরজা-জানালা, শোকেস আলমীরা, রান্না খাওয়ার জিনিসপত্র ও ঘরের ছাউনি ভাঙচুর এবং লুটপাট করে তছনছ করে ফেলা হয়। এতে ওই সব পরিবারের প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র ও স্বর্ণালংকার ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে আহতদের পরিবার জানান।
এদিকে, তান্ডব চলাকালে রজব আলীসহ তার পরিবারের নারী-পুরুষ বাঁচার তাগিদে আত্ম রক্ষার্থে লাটিসোটা ও ইটপাটকেল ছুড়লে আব্দুল্লাহ গংদের পক্ষের এনামুল হাসান (২২), ইমামুল (১৬), হাসান (২৪), সোহাগ (২৫), সুমন বাবু (১৮), ছবির ন্নেছা (৪৫) সহ ৭/৮ জন আহত হয়। আহতদের আশাশুনি ও সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) জানান, আব্দুল্লাহ গংরা বাদি হয়ে রজব আলী গংদের আসামি করে ওই দিন রাতে মামলা দায়ের করেছে। তবে কোন আসামী গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, হামলার শিকার গুরুতর আহত রজব আলী গংরা বাড়ীর সকলে আহত ও বাড়ী পুরুষ শুন্য থাকায় দেরীতে হলেও তাদের পক্ষে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার বাটন