Monday, September 1সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিচয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকেঃ নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কথিত উপদেষ্টা পরিচযে কাজী ইউসুফ জাহান নামে এক বহুমাত্রিক প্রতারক বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আটকে রেখে প্রায় ১ বছর যাবত ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ঢাকায় অবস্থানকারী প্রতারক কাজী ইউসুফ জাহানের নির্দেশে বোন জেসমিন এবং ইকবালের নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে গেলে ভুক্তভোগী ওই নারী ৯৯৯ ফোন করলে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে এ যাত্রায় রেহাই পায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার (৯ জুন) রাত দেড়টার সময় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের মৌতলা গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কথিত উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী আহলে হাদিস নেতা ইউসুফ জাহানের বাড়িতে। বর্তমান আহত অবস্থায় ধর্ষিতা ওই নারী গতকাল মঙ্গলবার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতারক কাজী ইউসুফ জাহান মৌতলা গ্রামের কাজী অলিউল রহমান ওরফে সেজো ময়নার পুত্র। ভুক্তভোগী ধর্ষিতা নারী জান্নাতুল কোবরা ওরফে হেলেনা (ছদ্মনাম) কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানার সহশ্রম গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূইয়ার কন্যা। একাধিক বিয়ের নায়ক নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা, কখনো ডিজিএফআই ও কর্মকর্তা, কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা, কখনো ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক, কখনো ব্যবসায়ী ও এম আর গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পরিচয়ে ব্যবসা, চাকরি, দেওয়ার ফাঁদে ফেলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজনের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকায় একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে ফ্লাট গড়ে তুলেছে। সেই সুবাদে ঢাকার উত্তর আদাবর শ্যামলীতে সারেন্ডাড ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজী ইউসুফ জাহান দায়িত্ব পালন ছাড়াও আহলে হাদিসের কেন্দ্রীয় একজন বক্তা হিসেবে ধর্ম প্রচারের দায়িতে আছেন। ভুক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌস কোবরা (ছদ্মনাম) পেটের দায়ে ঢাকায় অবস্থান করা কালীন তার শিশু পুত্রকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করে এবং নিজে অনলাইনে থ্রি পিসের ব্যবসা শুরু করে। তার নিকট থেকে থ্রি পিস কেনার সূত্র ধরে ইউসুফ জাহানের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পরিচয় এর সূত্র ধরে তাকে ঢাকায় ১ কাঠা জমি কিনে বাড়ি করে দেওয়া ছাড়াও বিয়ের আশ্বাসে ভাড়া বাসায় নিয়ে ধর্ষণ মেলামেশা করতে থাকে। পরবর্তীতে গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের মৌতলা গ্রামে কেউ না থাকার সুযোগে বিয়ের আশ্বাসে গত ২০২৩ সালের ২ জুলাই ওই বাড়িতে রেখে যায়। এবং সে প্রায় ঢাকা থেকে এসে তাকে বিয়ে না করে বিয়ের আশ্বাসে অবৈধ মেলামেশা ও জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে প্রতারক ইউসুফ জাহান ঢাকা থেকে মোবাইলে তার বোন জেসমিন নাহার এবং ভাই ইকবালকে লোকজন দিয়ে বাসা থেকে পিটিয়ে বাহির করতে বলে। সেই মোতাবেক গত রবিবার রাত আনুমানিক দেড়টার সময় বেধড়ক পিটানো শুরু করলে উপায়ান্তর না পেয়ে ভুক্তভোগী ওই মহিলা ৯৯৯ ফোন করে। ফোন পেয়ে থানার উপর পরিদর্শক নকিব পান্নু ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ওই মহিলাকে ওই বাড়িতেই অবস্থান করতে বলে আসে। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তাকে ঐ বাড়ি থেকে বাহির করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে তাকে পুনরায় বাড়ি থেকে বাহির করতে মারধর করলে মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলে তাকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ প্রসঙ্গে এম আর গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পলাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান ইউসুফ জাহান এম আর ফাউন্ডেশনের একজন চেয়ারম্যান। তবে আমি যতটুকু জানি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টের দায়িত্বে আছেন। তিনি ওই মহিলাকে তার গ্রামের বাড়ির কেয়ার টেকার হিসেবে রেখেছেন বলে জানান। তবে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। এ প্রসঙ্গে আরো জানার জন্য প্রতারক ইউসুফ জাহানের নিকট জানতে চাইলে তিনি পুরা বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান আমি কোন কিছু করি না। তবে ঢাকার আদাবরে আমার একটি সারেন্ডাড ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট নামে একটি মাদ্রাসা আছে। ওই মাদ্রাসায় ওই মহিলার ছেলে পড়ার সূত্র ধরে তার সাথে পরিচয় ঘটে। সেই সুবাদে আমি গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে রেখেছি । ধর্ষণের বিষয়ে এবং বিয়ের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন। তবে ভুক্তভোগী ওই নারী জান্নাতুল কোবরা( ছদ্মনাম) সাংবাদিকদের জানান অনলাইনের ব্যবসার সূত্র ধরে কাজী ইউসুফ জাহানের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। সেই সূত্রে তার ছোট ছেলেকে তার মাদ্রাসায় ভর্তি করি। আমাকে নিয়ে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ভাড়া বাসায় স্বামী স্ত্রীর মতন মেলামেশা করলেও এখনো পর্যন্ত আমাকে বিয়ে করেনি। বিয়ের কথা বললে সে আমাকে ছোট ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয় পরবর্তীতে বিয়ের আশ্বাসে আমাকে তার এই গ্রামের বাড়িতে মৌতলা রেখে যায়। এবং সে মাঝে মধ্যে ঢাকা থেকে এসে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। বিয়ের কথা বললে আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয় বলে জানান। এখন বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ইউসুফ জাহান তাহার ভাই ইকবাল এবং বোন জেসমিন নাহারকে দিয়ে ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী নিয়ে আমাকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বাইর করার চেষ্টা করলে আমি পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে আমাকে অবস্থান করতে বলেছে তারপরও আমাকে জোর পূর্বক ৭০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে বাহির হওয়ার জন্য মারধর করলে আমি হাসপাতালে ভর্তি হই।

শেয়ার বাটন