Tuesday, April 30সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মো‌মে‌নের স‌ঙ্গে বৈঠ‌ক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে বলেছিলেন পাকিস্থানের সাথে ৭১ সালে যায় হোক না কেন এখন আমাদের এই দুই দেশের সম্পর্ককে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এর ভিত্তিতে তিনি নিজেও আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, সামনে আমাদের অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে পাকিস্থানের সাথে সম্পর্ক আরো উন্নয়ন করা দরকার।

গত ২৪ মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত চিঠি দিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডি-৮ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান।

জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেস্ক, বাংলাদেশ এবং পাকিস্থানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এটিএম রকিবুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এবং তাঁরই নির্দেশনায় পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পাকিস্তানের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা বিতর্কিতভাবে উপস্থাপনা করে। এরই প্রেক্ষিতে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের নীরব ভূমিকা নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। এ ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনকে বিতর্কিত পতাকার ছবি সরানোর নির্দেশ দেয়।

এই নির্দেশনা দেওয়ারও দুইদিন পরে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন ওই বিতর্কিত পতাকা সরিয়ে ফেলে।
এখানে উল্লেখ্য যে, এই ছবি এখনো তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে দৃশ্যমান।

পতাকা ইস্যুতে যখন বিতর্ক দেখা দেয় তখন তার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান হাইকমিশন অসৎ উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপন করেনি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিছু নীতিনির্ধারকের তদবিরে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের সাথে তার দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। এক্ষেত্রে সাউথ এশিয়া ডেস্কের ডিজি এটিএম রকিবুল হক প্রধান ভূমিকা পালন করছেন।

যেখানে একটা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ দেশের মুক্তিযুদ্ধের নীতি এবং আদর্শ সমর্থনকারী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতি-নির্ধারকরা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের সাথে আপোষ করে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।

সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে নিন্দার ঝড় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সমর্থনের ফলে পাকিস্তান সরকার ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।

এ বিষয়ে সুশীল সমাজ, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসমূহ বাংলাদেশের ৫০ বছর পরেও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হঠাৎ এমন সরব ভূমিকা নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বরং বিভিন্ন ইস্যুতে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততাকে দুরে সরিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।

শেয়ার বাটন