Saturday, April 20সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

শতবর্ষী ঐতিহ্য গরুর রশি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

মো.শাহীন‌উজ্জামান শাহীন, নিজস্ব প্রতিনিধি: দোহার নবাবগঞ্জে শত বর্ষের ঐতিহ্য গ্রামের মানুষের পালের গরু দিয়ে কাছি (রশি) ছেঁড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গরু দৌড় গরুর রশি ছেঁড়া আবহমান বাংলার ঐতিহ্য কে বহন করে। গরুর রশি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা গ্রাম অঞ্চলের বাঙালীদের একেক অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কেউ বলে গরু দৌড়,কেউ বলে গরুর রশি ছেঁড়া, আবার কেউ আড়ং নামেও এ প্রতিযোগিতা বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্য কে মনে করিয়ে দেয়।

গতকাল শুক্রবার শ্রী-পঞ্চমী ও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ প্রতিযোগিতা শোল্লা ইউনিয়নে হয়ে গেল। অপরের দিকে বিল পল্লী যুব সংঘ ও চূড়াইন সাংস্কৃতিক সংঘও এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন।

শ্রী পঞ্চমী ও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শোল্লা মিলেনিয়াম বয়েজ ক্লাব গরুর রশি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা ও তিন দিন ব্যাপী বৈঠকী গান,বিচার ও লালন গীতির আয়োজন
করেছেন শোল্লা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে।

হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমেছে।

শোল্লা মিলেনিয়াম বয়েজ ক্লাবের সভাপতি নিখিল চন্দ্র মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শোল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.মিজানুর রহমান ভূঁইয়া কিসমত।

বিকাল ৩টার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন গরু আসতে দ্যিালয়ের মাঠে। অনেক বড় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে উৎসুক জনতার ভিড়ে। এ উপজেলা ছাড়াও অন্যান্য উপজেলার লোকজন আসে নবাবগঞ্জ,দোহার মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলা থেকেও লোকজন এসেছে গরুর রশি ছেঁড়া দেখতে। এ উপলক্ষে মাঠের চারপাশে বসেছে গ্রামীণ মেলা।

মেলায় বিভিন্ন ধরনের মুখ রোচক খাবার ও শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়েছে দোকানিরা। শিশু-কিশোর
থেকে শুরু করে সব বয়সের শৌখিন লোকজন কেনা
কাটায় ব্যস্ত হয়ে পরেন। বিকিকিনিতেও ধুম পড়েছে এদিন। তবে গরুর কাছি ছেঁড়ার মূল প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিকাল ৪ টার দিকে। আয়োজনে ছিল ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি গরু আসে বিভিন্ন এলাকা থেকে। এদের অধিকাংশ গরু ছিল বড় আকৃতির। গরু কে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য গলায় মালা গায়ে রঙ ও বিভিন্ন নাম লিখে গরুর গায়ে রং মাখিয়ে নিয়ে আসে।

কাছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা শুরু থেকে একই নিয়মে চলে আসছে এখানেও। মাঠের মাঝখানে একটি শক্ত খুঁটি গাঁড়া হয়। সেই খুঁটির সঙ্গে গরুর গলার দুই প্রান্তে কাছি দিয়ে ভালো ভাবে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর আয়োজক ও গরুর মালিকপক্ষের লোকজন আতশ বাজি,ঢোল-তবলা বাজিয়ে গরুকে উত্তেজিত করতে পিছন থেকে হৈচৈ করে ধাওয়া দিলে গরু দৌড় দিয়ে গলার কাছি ছিড়ে ফেলে।

যে গরু মোটা কাঁছি ছিঁড়তে পারবে সেই গরুর মালিক কে পুরষ্কৃত করা হয়। আর যদি কোনো গরু কাছি ছিঁড়তে না পারে,সেই গরু প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে।

শোল্লা মিলেনিয়াম বয়েজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহম্মেদ বলেন,অনুষ্ঠানটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখানে সব বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ এসে আনন্দ উপভোগ করছেন। আমাদের যুব সমাজ বর্তমানে মাদকের ভয়াল ছোবলের শিকার। আমি মনে করি,গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্যবাহী খেলা প্রতিটি উপজেলায় আয়োজন করা উচিত। যাতে যুব সমাজ লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলা
ধুলায় মনোনিবেশ করে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হতে পারে।’

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে ৩টি টেলিভিশন ও দশটি মোবাইল সেট পুরষ্কার দেওয়া হয়।

শেয়ার বাটন