Thursday, April 25সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান টিআইবি’র

সীমান্ত ডেস্ক: গেলো বুধবার রাতে আন্তঃনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে তিনজন যাত্রী বিনাটিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। বিনা টিকেটে ভ্রমণের জন্য ওই তিনজন যাত্রীকে জরিমানা করেন কর্তব্যরত টিটিই। পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জরিমানা করায় টিটিই বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক মন্তব্য করে মন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী’র তিন আত্মীয়কে জরিমানা করায় সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এটি একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে টিআইবি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। ন্যায়-নিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের কারণে পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট টিটিই-কে তড়িৎ গতিতে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটিই পরিষ্কার হয়েছে যে, ক্ষমতাবানরাই শুধু নয় বরং তাঁর/তাঁদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা আত্মীয় পরিজনদের জন্যও আইন প্রযোজ্য নয় বরং অনিয়মের কাছে মাথানত করেই রুটিরুজি টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপায়।

একইসাথে, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে রেলমন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণ, জরিমানা করায় টিটিই বরখাস্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্রধরে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, প্রথমত রেলমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়!

দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শক তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করায়, তাঁকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করেই তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে বরখাস্ত হবার ঘটনা- দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটিই পৌঁছেছে যে, ক্ষমতার দাপট ও অনিয়মই হচ্ছে বাস্তবতা।

তাছাড়া, এই নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত এখনও গুটিকয়েক যারা নিষ্ঠা ও সততার সাথে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁদের জন্য একটি শক্তিশালী নেতিবাচক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে।

সেই টিটিইকে বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয়ে তলব বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও এ ঘটনায় রেলমন্ত্রী নিজের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর আত্মীয় পরিচয়দানকারীদের চেনেন না বলে দাবি করেছেন।

একইসাথে রেলকর্তৃপক্ষ টিটিই বরখাস্তের জন্য যাত্রীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং যার সাথে রেলমন্ত্রীও একমত হয়েছেন।

এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, বিনা টিকিটের সেসব যাত্রী টিটিইকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় কেন দিয়েছিলেন? তাদের সত্যিকার পরিচয় রেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করেছিলেন কি-না?

অধিকন্তু যাত্রীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ বিষয়ে টিটিই-এর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রেলমন্ত্রীর পরিচয় কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিলো? এসব বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম জানান, একজন টিটিইর বরখাস্ত হওয়ার সঙ্গে তার আত্মীয় পরিচয়দানের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তিনি বলেন, আমি এখন পর্যন্ত জানি না এরা কারা। আমার কাছে কোনো তথ্য নাই এরা কারা। ফলে কেউ পরিচয় দিয়েছে কী দেয়নি সেটা আমি জানি না।

মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, আমি রেলওয়েতে খবর নিয়ে জেনেছি, তা হলো ওই টিটিইর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন যাত্রী যে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, এবং ইয়ে করেছে..। লিখিত কমপ্লেইনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে রেলওয়ে। এখন হতে পারে টিটিইর যে অপরাধ সেটা থেকে সে নিজেকে সেভ করার জন্য এটা বলতেছে।

উল্লেখ্য, সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে, সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযোগটি যদি ‘গ্রেইভ অফেন্স’ বা গুরুতর অপরাধের অভিযোগ হয় তাহলে তদন্তের আগেই সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

শেয়ার বাটন