Thursday, April 25সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

যাকাত সদকাতুল ফিতর

মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ

যাদের উপর যাকাত ফরজঃ

যাকাত আরবি শব্দ। অর্থ প্রবৃদ্ধি,  এট আদায়ের মাধ্যমে বরকত হয়। ইসলামী আইন বিদগন এ ব্যাপারে একমত যে,১. স্বাধীন, ২.পূর্ণবয়স্ক,৩. মুসলিম নর-নারী,যার কাছে  নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তার উপর  যাকাত দেওয়া ফরজ।

 যাকাতের শর্তাবলীঃ

 ১.সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকাঃ

সরকারি মাল বা অন্য কারো মাল রক্ষণাবেক্ষণকারী উপর যাকাত ফরয নয়,যে মাল অন্যের হাতে চলে গেছে তা পাওয়ার আশা না থাকলে সে মালের যাকাত ফরয হবেনা।

২.সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়াঃ

যাকাতের জন্য সম্পদকে উৎপাদনক্ষম হতে হবে। তাই ব্যক্তিগত ব্যবহারের মাল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের দ্রব্যাদির উপর যাকাত নেই। যেহেতু এগুলো প্রবৃদ্ধি সাধনে অক্ষম। কিন্তু গরু-ছাগল নগদ অর্থ ও ব্যবসার জন্য কৃত মালামাল প্রবৃদ্ধি ও বর্ধনশীল তাই এগুলোর উপর যাকাত ফরয।

৩.নিসাবঃ

 কারো কাছে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় উপকরণ। যেমনঃ- জামাকাপড়, গাড়ি, আহারের খাদ্য সামগ্রী ব্যতীত। ৮৭.৪৫ গ্রাম সাড়ে সাত তোলা সোনা। অথবা৬১২.১৫ গ্রাম সাড়ে ৫২ তোলা রুপার বা ওই পরিমাণ মূল্যের কোন জিনিস থাকে, আর তা ১ বছর অতিক্রম করে তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ।৪০ভাগের ১ ভাগ শতকারা আড়াই টাকা হারে।

 ৪.জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় উপকরণের অতিরিক্ত  হওয়াঃ

 সারাবছরের প্রয়োজনীয় ব্যয় বহনের পর যে সম্পদ অতিরিক্ত  থাকবে। সে সব মালের যাকাত দিতে হবে। যেমনঃ- এক ব্যক্তির 10 লক্ষ টাকা রয়েছে। তার বছরে খরচ তিন লক্ষ টাকা সে ব্যক্তি বাকি সাত লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে। যদি সে সাত লক্ষ টাকা পণ্য এক বছর তার মালিকানায় থাকে।

৫. ঋণ মুক্ত হওয়াঃ

 ঋণী ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয নয়।তবে ঋণী বলতে সেই ঋণ বোঝায় যে ঋণ না করলেই নয়। সাংসারিক বা অতি প্রয়োজনীয় ঋণ করলে সে ব্যক্তিই ইসলামের যাকাত নীতিতে ঋণী বলে বিবেচিত হবে। এবং তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। 

 ৬.সম্পদ এক বছর থাকাঃ

 কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ন ১ বছর  থাকলে সে সম্পদের যাকাত দেওয়া ফরজ হবে, নতুবা নয়।

৬. যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হবেঃ

১. সোনা রুপাঃ

সোনার অলংকার বা সোনা রুপার তৈরি যে কোন বস্তু বা তা পিণ্ডাকারে থাকলেও তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। ২.ব্যবসায়ীর মালামাল। ৩.নগদ অর্থ।

৪.কৃষি ফসল।

৫.খনিজ সম্পদ।

৬. গরু মহিষ।

৭.ছাগল ভেড়া।

৮. উট।

৯.ঘোড়া।

মাসারিফে রাকাতঃ

যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ,  যেখানে সেখানেই  যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। বরং নির্ধারিত স্হানে যাকাত দিত হবে। নিশ্চয় সদকা (যাকাত)

১.গরিবদের ২.সহায়-সম্বলহীন দের ৩.যাকাত আদায় কারী কর্মচারীদের

৪.তাদের (নওমুসলিমদের) মন সন্তুষ্টি

৫.দাস-দাসীদের  ৬.ঋণগ্রস্তদের আল্লাহর রাস্তায় এবং

৮. অভাবে প্রোথিত মুসাফিরের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ।

তাওবা ৬০ আয়াত

 ফিতরা

ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় যে ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় উপকরণ, যথাঃ- পরিধানের কাপড়, শয়নের গৃহ এবং আহারের খাদ্যদ্রব্য ব্যতীত ৮৭.৪৫গ্রাম সাড়ে ৭ তোলা সোনা অথবা ৬১২.১৫গ্রাম সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা এর সমপরিমাণ মূল্যের অন্য কোন মালের মালিক হবে, তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব।

ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য উক্ত মাল যাকাতের মতো এক বছর জমা থাকা শর্ত নয়, বরং ব্যবসা বা যে কোন মাধ্যমে ঈদের দিন মালিক হলেই ফিতরা ওয়াজি হবে।

ফিতরার পরিমান

প্রত্যেকের সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ আধা সা(১সের১৪ছটাক)গম বা আটা বা তার মুল্য(মতান্তরে ১সের১২ছটাক গম বা আটা) যা গরীব-মিসকিনদের মধ্য বিতরণ করতে হবে। তবে পূর্ন 2সের দেয়াই উওম। কারণ বেশি হলে ক্ষতি নেই। কম হলে ফিতরা আদায় হবে না। আর যব বা যবের ছাতু হলে পূর্ণ এক সা(৩শের ৯ছটাক) দিতে হবে। তবে সতর্কতামূলক ৪সের দেওয়াই শ্রেয়। খুরমা কিসমিস দিয়ে ফিতরা দিলে গম বা আটার দিগুন  দিতে হবে।

যাদেরকে সাদকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে:

যারা যাকাতের হকদার তারাই সদকাতুল ফিতরের হকদার।

 যারা সদকাতুল ফিতর ও যাকাত পাবে না।

১.সাহেবে নিসাব। ২.কোরাইশী বংশীয় কোন ব্যক্তি।

৩. মলদ্বারের নাবালক সন্তান, নিজের মাতাপিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানি, নিজের ছেলে মেয়ে, নাতি-নাতনি, এদেরকে যাকাত ও ফিতরা দেওয়া যাবে না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক ভাবে ইসলামের বিধান মেনে জীবন জাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন

বি.দ্রঃ- এ বছর জন প্রতি সাদকাতুল ফিতর সর্বনিম্ন  ৭৫ টাকা, সর্বোচ্চ ২,৩১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ।

খতিব,কোনাবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গাজীপুর ঢাকা।

শেয়ার বাটন