Tuesday, April 23সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

বিদেশি পরামর্শে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশি কোনো পরামর্শে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না তার পরামর্শ দেবে জনগণ। অন্য কেউ না। জনগণ যেদিন পরামর্শ দেবে, জনগণের আস্থা যেদিন হবে যে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণ নিজের হাতে ভোট দিতে পারবে, মেশিনের মাধ্যমে নয়— সেদিন জনগণ বলবে আপনারা নির্বাচনে যান। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিদেশি কোনো পরামর্শে নয়।’

গতকাল শনিবার দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গত ৪ এপ্রিল রাতে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ সহায়তা চান। বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র ও নির্বাচনের তাগিদ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আজ বাংলাদেশে যে সংকট তা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নাই, মানুষের অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মামলা-হামলা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, স্বৈরাচারী সরকার, গায়ের জোরের সরকার সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে।

দেশ আজ ধ্বংসের কিনারায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমরা লজ্জিত, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন, ধরনার ইংরেজি হচ্ছে লবিং। কয়েকদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছে বিএনপি নাকি ধরনা দেয়। আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণিত ধরনা কারা দিচ্ছে। এই সরকার সব দিকে যখন মনে করছে তাদের ব্যর্থতা, সব ক্ষেত্রে তাদের পরাজয়, তখন তারা বিদেশিদের সহযোগিতা চাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এটা তো বেশি কিছু কথা নয়।

এই সরকার পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে যে কারচুপি, যে ডাকাতি করেছে তাতে জনগণ ভোটের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আমাদেরও আস্থা নাই। এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। এটা আমরা ঘোষণা করেছি। এখন সরকারের উচিত পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া। তাহলে দেশের সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা আসবে। বিএনপিও জনগণের দল হিসেবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’

কেন ডায়রিয়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে : মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে ডায়রিয়া হচ্ছে। ৬২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া এখন হচ্ছে। আইসিডিডিআরবি কালকে বলেছে যে, ৬২ বছরে এত রোগী কখনো আসে নাই। কেন এত রোগী? কারণ এই ঢাকা শহরে প্রত্যেকটি টেপের পানি দূষিত পানি। আপনি গিয়ে দেখেন লাইনের যে পানি সেগুলোতে দুর্গন্ধ ও ব্যাকটেরিয়া বোঝাই। তার ফলে আজকে প্রতিদিন প্রায় ১৪শ-১৫শ লোকের ডায়রিয়া হচ্ছে।’ ‘ওয়াসার যে এমডি তিনি কত বছর ধরে আছেন জানেন? ১০ বছরের বেশি সময় আছেন।

তাকে বেতন দেয়া হয় বাংলাদেশে সমস্ত কর্মকর্তাদের চাইতে সবচেয়ে বেশি, পাঁচ লাখ টাকার ওপর বেতন পায়। তাকে অনেকবার সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সরাতে পারেনি। কারণ তিনি অত্যন্ত প্রিয় মানুষ আমাদের সরকার প্রধানের। তিনি বলেন, ‘এভাবে সমস্ত জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের দেখুন তাদেরকে বসানো হয়েছে তারা কী করে এখন? চুরি করে। চিন্তা করতে পারেন। আবার তারা নিজেরাই বলে যে, এখন ভালো লোককে উপাচার্য হিসেবে পাওয়া যায় না। কী লজ্জার কথা। আরে আপনারা ভালো না বলেই তো ভালো লোককে পান না। ভালো লোক হলেই তো ভালো লোক পাওয়া যাবে। আপনারা বিভক্ত করে রেখেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভাগ করে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো কিছু দেখেন না। যার ফলে গোটা দেশকে আজকে আপনারা দলীয়করণ করে ফেলেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর রান্নার নতুন রেসিপি : মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই রোজার মাসে আমরা একটা শসা কিনতে পারি না, এই রোজার মাসে আমরা একটি বেগুন কিনতে পারি না। দুঃখ হয় যখন প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে রান্নার নতুন রেসিপি দেন। সেই রেসিপিটা কী? তিনি বলেছেন যে, মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানাও। যখন তারা পারছে না বেগুন দিতে, যখন তারা পারছে না শসা দিতে, যখন তারা পারছে না চাল-ডাল দিতে, তখন তারা এ সমস্ত কথা বলছে।’ তিনি বলেন, ‘গতকাল তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে বিএনপির কারসাজি আছে। সব সময় তিনি এটা বলে এবং বলে যে, যা কিছু ঘটে তার পেছনে নাকি বিএনপি আছে। আরে ভাই, বিএনপি যদি সব কিছু ঘটাতে পারে তাহলে তোমরা ক্ষমতায় আছো কেন? ক্ষমতা ছেড়ে দাও, বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দাও দেখো আমরা দেশ চালাতে পারি কিনা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার হচ্ছে শুধুমাত্র সেই সব লোকের সরকার, মুষ্টিমেয় কয়েকটা লোককে বড়লোক করার জন্য গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তারা ব্যবহার করছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কি করছে, যারা প্রতিবাদ করছে তাদের তারা গ্রেপ্তার করছে, সাজা দিচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এই দেখেন, মতঝিলে শ্রমিক দলের একটা প্রোগ্রাম থেকে ইশরাক হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। কেন ইশরাককে গ্রেপ্তার করলেন? কারণ সে প্রতিবাদ করেছিল, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের কেন মামলা দিলেন? তারা প্রতিবাদ করেছিল। তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে।’

‘দেশে স্বাস্থ্যের চিত্র’ : মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত পরশু বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস গেছে। আমাদের সংবিধানে যে পাঁচটি মূল বিষয় অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য। সেই স্বাস্থ্য সুবিধা তো আমাদের শ্রমিক শ্রেণি পায় না। হাসপাতালে কোনো সুবিধা শ্রমিকদের দেয়া হয় না। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে যারা বড় বড় হাসপাতালে যেতে পারে তারাই চিকিৎসা পায়। আপনারা পিজিতে যান, মেডিকেলে যান, সরকারি হাসপাতালে যান সেখানে কোনো চিকিৎসা আপনি পাবেন না।’

‘আপনাকে ফ্লোরের মধ্যে পড়ে থাকতে হবে, ঔষধ লিখে দেবে সেই ঔষধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। আপনাকে টেস্ট লিখে দেবে সেই টেস্ট বাইরে থেকে করে আনতে হবে। এই সরকার বারবার চিৎকার করে বলে আমরা অনেক কাজ করছি, স্বাস্থ্যের জন্য সব কাজ করছি। একজন মেহনতি মানুষও কিন্তু এই সেবাটুকু পায় না।’

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা, শ্রমিক দলের আবুল খায়ের খাজা, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, জাহাঙ্গীর আলম, আসাদুজ্জামান বাবুল, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জুলফিকার মতিন, কাজী আমীর খসরু, খোরশেদ আলমসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার বাটন