Tuesday, April 16সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

দুই বছরে সড়কে ঝরেছে ১,৬৭৪ শিশুর প্রাণ!

সীমান্ত ডেস্ক: দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৭৪ শিশু নিহত হয়েছে। সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের কারণে শিশুরা সড়ক দুর্ঘটনায় অস্বাভাবিক হারে হতাহত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরেছে সংগঠনটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৩৩১ শিশু, যা মোট নিহতের ১৯.৭৭%। রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১০২৭ শিশু, যা মোট নিহতের ৬১.৩৫%। ট্রাক, পিকআপ, ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক ইত্যাদি পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৮ শিশু, অর্থাৎ ২.৮৬% এবং মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ২৬৮ শিশু, অর্থাৎ ১৬%।

যাত্রী হিসেবে শিশু নিহতের যানবাহনভিত্তিক চিত্র:
যাত্রী হিসেবে শিশু নিহতের যানবাহনভিত্তিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাস যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২ শিশু (২১.৭৫%) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী হিসেবে ২৫ শিশু (৭.৫৫%), থ্রি-হুইলার (সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ১৮৩ শিশু (৫৫.২৮%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ৫১ শিশু (১৫.৪০%) নিহত হয়েছে।

যানবাহনের চাপায় / ধাক্কায় শিশু নিহতের চিত্র:
বিভিন্ন যানবাহনের চাপা/ধাক্কায় শিশু নিহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়-
১. পণ্যবাহী যানবাহনের (ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ড্রামট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি ইত্যাদি) চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২৫৮ শিশু (২৫.১২%)
২. বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১৪৩ শিশু (১৩.৯২%)
৩. থ্রি-হুইলারের (সিএনজি, অটৈারিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৩২১ শিশু (৩১.২৫%)
৪. স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২০৮ শিশু (২০.২৫%)
৫. বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৯৭ শিশু (৯.৪৪%)।

শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন:
দুর্ঘটনায় শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহাসড়কে নিহত ২৮৭ শিশু (১৭.১৪%), আঞ্চলিক সড়কে নিহত হয়েছে ৩২৮ শিশু (১৯.৫৯%), গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে ৮৮৯ শিশু (৫৩.১০%), শহরের সড়কে নিহত হয়েছে ১৪৭ শিশু (৮.৭৮%) এবং অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছে ২৩ শিশু (১.৩৭%)

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
শিশু নিহত হওয়া দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোরে ১.৫৫%, সকালে ৫১.৭৯%, দুপুরে ১৩.৩২%, বিকালে ২২.৪৬%, সন্ধ্যায় ৬.৫১%, এবং রাতে ৪.৩৬% দুর্ঘটনা ঘটেছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণ:
১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৩৩৭ টি (২০.১৩%), ৬ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৭৫৪ টি (৪৫.০৪%) এবং ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৫৮৩ টি (৩৪.৮২%)।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণসমূহ:
১. দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া;
২. সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার অভাব;
৩. পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের পরামর্শ ও পশিক্ষণ না দেওয়া;
৪. অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো;
৫. দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট;
৬. আহত শিশুদের চিকিৎসায় পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা।

সুপারিশসমূহ:
১. সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ করা;
২. নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে পরিবারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের সচেতন করা;
৩. অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
৪. জেলা পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা;
৫. সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ সরকারি তহবিল গঠন করা;
৬. “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” বাস্তবায়ন করা।

শেয়ার বাটন