Wednesday, April 24সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার-১১

হাসানুজ্জামান সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: আজ ১৪ই মার্চ-২৩ দুপুর ১২.২০ ঘটিকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম-বার, পিপিএম-বার,অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি), ডিএমপি এ তথ্য জানান,
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনায় ডিবি কর্তৃক সর্বমোট ১১ জন গ্রেফতার ও ০৭ কোটি ০১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় আরও ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল রাজধানী বনানীর করাইল বস্তি ও নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর থানা এলাকা হতে এই ০৩ জনকে গ্রেফতার গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা মোঃ হৃদয় (২১) মোঃ মিলন মিয়া (২৯)আকাশ। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে ৫৮ লক্ষ ০৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ কর্তৃক এ পর্যন্ত সর্বমোট ৭ কোটি ০১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার এবং ১১ জন গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন,গত ইং-০৯.০৩.২৩ তারিখ ডিএমপি ঢাকা’র তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকা হতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার সময় মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর একটি গাড়ী ডাকাতির কবলে পড়ে। এই ঘটনায় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ গত ১২.০৩.২৩ তারিখে প্রায় ২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার পূর্বক ০৮ (আট) জন গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এই ঘটনার বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। কেউ ছিল পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ শুধুমাত্র ঘটনার সময় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করে ৪/৫ জন। এদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানা নামে ২ জন ডাকাতির মূল ছক সাজায়। সোহেল রানা পূর্বে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর ড্রাইভার ছিল। ড্রাইভার থাকার কারণে সে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর খুটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত ছিল। কোন প্রকার বাধাহীন ভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ডাকাতির মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আকাশ তার পূর্ব পরিচিত ইমন মিলনের কাছে টাকা ডাকাতির বিষয়টি শেয়ার করে এবং তাকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাকে তারা জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়। ইমন মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে এবং জনবল যোগান, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন ক্রয়ের দায়িত্ব দেয়। সানোয়ার ০৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা হতে মোট ০৯ (নয়) জন সদস্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ০২ দিন পূর্বে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়।
তিনি আরও জানান , আকাশ এবং সোহেল রানা, ইমন মিলন এবং সানোয়ারের কাছে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে। তারা তাদেরকে জানায় যে, তারা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবে এবং সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। পরবর্তীতে ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে উঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ডাকাতির পর মূল হোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারনা করে যে, আকাশ তাদের হাতে ধরা পড়ে গেছে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিটে ফেলে দেয়। তাই তারা ট্র্যাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়ো করে। পরবর্তীতে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মত টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের দেশের বিভিন্ন জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল হতে সংগ্রহ করা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মত বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত, গ্রেফতার ও লুন্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। লুন্ঠনকৃত টাকার একটি বড় অংশ ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা আকাশ ও সোহেল রানা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি’র গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মানস কুমার পোদ্দার পিপিএম বার এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং এডিসি প্রশাসন মোহাম্মদ নূরুল আমীন পিপিএম সেবা এর তত্ত¡াবধানে মিরপুর জোনাল টিমের টিম লিডার জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়।

শেয়ার বাটন