Thursday, April 25সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

গ্রামীণ টেলিকম এবং টেলিকম ইউনিয়নের সাথে প্রতারণা অভিযোগে গ্রেফতার-১

হাসানুজ্জামান সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: রবিবার (২৮ আগস্ট ২০২২) বেলা ১২:০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ সংক্রান্তে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত ও বিধি বহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনায় গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের আরও এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ মাইনুল ইসলাম, সে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি।
বুধবার (২৪ আগস্ট ২০২২) তাকে কুমিল্লা সদর থানার মগবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। এসময় তার হেফাজত হতে একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাই ফোন এবং ঢাকা ব্যাংকের ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এর একটি মামলা করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিবি-গুলশান বিভাগকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ দেখতে পায়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫% অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে ওয়ার্কারর্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড(WPPF), শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বরাবর প্রদান করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির “কর্মচারীরা স্থায়ী নয়” এবং “কোম্পানি অলাভজনক” ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার কথা বলে শ্রমিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিভিন্ন আইনানুগ দাবি-দাওয়ার কারণে গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ একযোগে বেআইনিভাবে ৯৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ পাওনা, বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরে কোম্পানিতে পুনর্বহাল না করা, কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরেও দায়িত্ব না দিলে-কনটেমপ্ট অফ কোর্ট, কোম্পানির অবসায়ন দাবীসহ অন্যান্য দাবীতে শ্রমিকরা এবং শ্রমিক ইউনিয়ন গ্রামীণ টেলিকম এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রম আদালত এবং হাইকোর্টে প্রায় ১৯০ টি মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন। তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে এ সকল মামলা উত্তোলন, শ্রমিকদের অর্থ প্রদান এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ১০/০৫/২০২২ তারিখ ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট একাউন্ট খোলা হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫% টাকা হারে কোম্পানি হতে এই সেটেলমেন্ট একাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। একাউন্টটি হতে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়। নিয়মানুযায়ী শ্রমিকদের সকল পাওনাদি উক্ত একাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট একাউন্ট হতে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫% অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোন অর্থ ছাড় করার সুযোগ না থাকলেও বিধি বর্হিভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং ইতিপূর্বে অত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও গ্রেফতারকৃত শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ মাইনুল ইসলামসহ ইউনিয়নের কতিপয় নেতার যোগসাজসে উক্ত একাউন্টের অনুমান ৪৩৭ কোটি টাকা হতে চেকের মাধ্যমে গত ১৭/০৫/২০২২ এবং ২৫/০৫/২০২২ তারিখে ২৬ কোটি ২২ লক্ষ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে নিয়ে আসা হয়।
গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের উক্ত একাউন্টের মোট তিনজন সিগনেটরি ছিলেন ইতিপূর্বে অত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত সভাপতি, সাঃ সম্পাদক এবং মামলার বাদী অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান। অন্যান্য শ্রমিকদের ন্যয় টাকা পাওয়ার পরেও যোগসাজশে সিবিএ সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান, সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ হাসান এবং সহ-সভাপতি মাইনুল হাসান ইউনিয়নের একাউন্ট হতে মিরপুরে তাদের ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্টে তিন কোটি করে মোট ৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করে। ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবী অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি/পারিতোষিক হিসেবে হাতিয়ে নেয়।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মোঃ মাইনুল ইসলাম মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং জানায় যে, গ্রামীন টেলিকমের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকেসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানের আরো সহকর্মীদের অর্থের প্রলোভনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করে গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য এবং কর্মচারী ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবীকে অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি/পারিতোষিক প্রদান করতে উৎসাহীত করে।
অন্যান্য শ্রমিকদের ন্যায় মাইনুল ইসলাম আইনানুগভাবে প্রাপ্য ৪ কোটি টাকা নেয়ার পরেও তার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর- ১১৫১৫৭০০৪২৯০৮-এ ২ কোটি এবং ব্রাক ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর-২০১২০৮৩১৮০০০২-এ ১ কোটিসহ অতিরিক্ত মোট ০৩ (তিন) কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তাঁর অন্য দুই সহকর্মী অর্থাৎ টেলিকম ইউনিয়নের সভাপতি এবং সেক্রেটারিসহ সর্বমোট ৯,০০,০০০০০০/- (নয় কোটি) টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্রামীন টেলিকম শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণা করেছে।বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত আসামী সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেয়ার বাটন