Tuesday, September 9সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

কালীগঞ্জে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকেঃ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি এবং জন্মদিন পালন উপলক্ষে ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের প্রতিবাদে বহুল আলোচিত প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর অপসারণের দাবিতে গত ১ সপ্তাহ জুড়ে শিক্ষার্থীরা বই পাঠ্যপুস্তক রেখে আন্দোলনে মাঠে নেমেছে। ঘটনাটি ঘটে চলেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের নিজদেবপুর গ্রামে অবস্থিত উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল গত ২১ নভেম্বর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। এদিকে গত ১৮ তারিখ হতে অদ্যবধি প্রধান শিক্ষককে অপসারণ না করা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে বা কোন পরীক্ষায় অংশ নেবে না বলে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। রবিবার (২৪ নভেম্বর) বেলা ১২ টার সময় ঐ বিদ্যালয় গেলে প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার নবম শ্রেণীর ৬ জন এবং দশম শ্রেণীর ১ জন ছাত্রী সাংবাদিকদের তারা জানান প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু এই বিদ্যালয় যোগদানের পর হতে প্রায় ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে তার অফিসরুমে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি চালিয়ে আসছিল। বিষয়টির প্রতিবাদ করায় পরীক্ষায় ফেল করানোর ছাড়াও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। অফিসটা তাহার নিজের বাড়ি মনে করে গোপন কক্ষ এবং রান্নাঘর বানিয়ে রাজনীতি কর্মকান্ড পরিচালনাসহ সেখানে এই সমস্ত কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। গত ৩০ অক্টোবর নিজের খরচে ছাত্রীদের জন্মদিন পালন করার জন্য স্কুলের ছুটির পরে তার গোপন কক্ষে নিয়ে ছাত্রীদের শারীরিকভাবে যৌন হয়রানি করে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুকে অপসারণের দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর আন্দোলনে মাঠে নামে। ওই সময় শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুকে অফিসে আটকে রেখে ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকরা ক্ষিপ্ত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকিবিল্লাহ এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে বিকাল ৪ টার দিকে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে মুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে গত ১৯ জানুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত স্মারকলিপে দিতে গেলে ত্রুটির কারণে সেটা সংশোধন করে গ্রহণের কথা বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা ২০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের নিকট গিয়ে তাদের যৌন নিগ্রহের কথা খুলে বলেন। ওই সময় জেলা প্রশাসক মহোদয় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ২১ নভেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জবাবদানের নোটিশ করে। তারপরও যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এবং শ্রেণিকক্ষে ফিরবে না বলে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আগামী ২৮ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। গতকাল বিদ্যালয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক আলিমুজ্জামান, খোকন, রবিউল, শিক্ষক মুস্তাহিদ, হাফিজুর রহমানসহ একাধিক অভিভাবক জানান এবং প্রধান শিক্ষকের গোপন কক্ষসহ অপকর্মের স্থানগুলো শিক্ষার্থীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান। তারা বলেন, বিগত পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু আমাদের সন্তানদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি করার বিষয়টি তারা জানতো না এবং আমাদের সন্তানেরা বিষয়টি ভয়ে কোনদিন আমাদের বলেনি। ঘটনা জানার পরে আমরা এমন প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে না রাখার দাবিতে আন্দোলনে মাঠে আছি। আশা করি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের দাবি মেনে নিয়ে অচিরেই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ অনুকূলে ফিরিয়ে আনবেন কর্তৃপক্ষ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই প্রধান শিক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় অফিসটা তাহার রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। এছাড়াও এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার আগে কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অনুরূপ সেখানকার ছাত্রীরাও যৌন হারানির শিকার হয়ে গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটাতে হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।এ ছাড়াও বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্যামনগরে একটি বাসা বাড়িতে এক গৃহবধূকে নিয়ে ফুর্তি করা এবং পুলিশের হাতে ধরা খাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখেছি। আমরা অনতিবিলম্বে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট এই লম্পট প্রধান শিক্ষককে দ্রুত অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডলের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান কারণ দর্শানোর জবাব পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার বাটন