Friday, April 19সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

কমবে তেল চিনি ছোলার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্য মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকার বদ্ধ পরিকর বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তাই এখন থেকে শুরু হয়ে পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বাজার স্থিতিশীল রাখতে তেল, চিনি ও ছোলার উপর বিদ্যমান ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসের দাম যাতে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সে জন্য যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট ছিল সেগুলো তুলে নিয়েছি। সরকার থেকে যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা পূর্ণ মাত্রায় করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রয়োজন দেখা দেবে তখন আমরা টিসিবিকে ব্যবহার করব। প্রয়োজন দেখা দিলে সরকারকে ফ্লেক্সিবল অবস্থায় থাকতে হয়। কারণ যখন যেটা প্রয়োজন দেখা দেয় তখন সেটা আনার ব্যবস্থা করতে পারে। তাই বলতে পারি সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার করছি।’

কোন কোন পণ্যের ভ্যাট তুলে নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট তুলে নেয়া হয়েছে। মূলত আমাদের রমজান মাসে যেসব পণ্য বেশি প্রয়োজন সেসব পণ্যের ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ সবাই এগুলো ভোগ করে। ভোজ্যতেল সয়াবিনের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নিজস্ব উৎপাদন কম হলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যে জিনিসগুলো আমদানি করি, যেগুলো আমাদের হাতের বাইরে, সেগুলো অনেক প্যারামিটারের কারণে দাম বেড়ে যায়। তখনো ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন— এখন যুদ্ধ হচ্ছে সেটা একটা কারণ।

এলসি প্রাইস, ট্রান্সপোর্ট কস্ট এগুলো বেড়ে যায়। যারা আমদানি করেন তারাও সুযোগটা য়োর চেষ্টা করেন, সে কারণে আরও বেশি দাম বাড়ে। জিনিসের দাম যাতে সহনীয় থাকে, সে জন্য আজকে যেসব আইটেমের ওপর ভ্যাট ছিল সেগুলো তুলে নিয়েছি। সরকার থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা করা দরকার সেটা করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলায় ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ পরিস্থিতি সামাল দিতে শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি টিসিবিকে

আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবার যে উদ্যোগটা নেয়া হচ্ছে, সেটা হলো টিসিবিকে শক্তিশালী করা। বাজারে সিন্ডিকেটের কাছে যদি কোনো মালামাল থেকে থাকে, দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তারা সেই সুযোগ পাবে না, টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সঠিকভাবে বিতরণ করা গেলে। টিসিবিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক কোটি পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ করা হবে।’ অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

তবে ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না। এর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ভোজ্যতেলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে রমজান মাসে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণমূলক আমদানি শুল্কে ১০ শতাংশ ছাড় অব্যাহত রাখার ঘোষণা এসেছিল।’

জানা গেছে, বর্তমানে ভোজ্যতেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিক্রয় পর্যায় ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এ ছাড়া চিনিতে সর্বমোট ৬৫ শতাংশ ভ্যাট বা শুল্ক রয়েছে। এর মধ্যে স্পেসেফিক ডিউটি প্রতি টনে তিন হাজার টাকা। রেগুলেটরি ডিউটি ২০ শতাংশ যা কয়েক মাস আগেও ৩০ শতাংশ ছিল। এআইটি বা এডভান্সড ইনকাম টেক্স রয়েছে ২ শতাংশ। আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোজ্যতেল আমদানিতে যে পরিমাণ ভ্যাট নেয়া হয় সেটা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। সরকার আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট তুলে নিলে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এ দিন ক্রয় কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চারটিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আটটি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ছোলা, মসুর, ডাল ও সয়াবিন কিনে জনগণের মধ্যে বিতরণ করবে।

টিসিবিকে ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকায় মোট ১৪ হাজার টন চিনি সরাসরি কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা সুগার রিফাইন্ড লিমিটেড ও সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রত্যেকের কাছ থেকে সাত হাজার টন চিনি ৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ক্রয় করা হবে।

অপরদিকে ৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ১০ হাজার টন ছোলা সরাসরি কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেনা কল্যাণ সংস্থার কাছ থেকে দুই হাজার টন ছোলা ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকায়; মেসার্স ব্লু স্কাই এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে চার হাজার টন ছোলা ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় এবং রুবি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে চার হাজার টন ছোলা ৩২ কোটি ৫৬ লাখ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আবার ২১১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১৯ হাজার ৫০০ টন মসুর ডাল সরাসরি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইজ সার্ভিসেস লিমিটেড, পরবো ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স রায় ট্রেডার্স, প্লানটেজিক ইনকর্পোরেশন, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও বসুমতী ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে এই ডাল ক্রয় করা হবে। এছাড়া যে ভোজ্যতেল নিয়ে দেশজুড়ে এত হইচই সেই পণ্যটি ২৮৭ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৬ টাকায় মোট এক কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫২ লিটার সরাসরি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সুপার অয়েল রিফাইন্ড লিমিটেড, মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড, বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও শুন শিং এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে এই সয়াবিন তেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সমপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব সরকার গ্রহণ না করার পর থেকে বাজারে তৈরি হয়েছে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, মিল থেকে তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছেন না। তেল সংকটের কারণে বোতলজাত তেল কিনতে গিয়ে সাথে অন্য পণ্য কেনার শর্ত মানতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

এদিকে গতকাল নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বাজার পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর নজরদারিতে আছে জানিয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাজারে যেকোনো ধরনের জনস্বার্থবিরোধী সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব শেখ হাসিনা মেনে নেয়নি, নেবে না এবং প্রশ্রয়ও দেবে না।’ তাই যে সব ব্যবসায়ী রমজান মাসকে টার্গেট করে জনস্বার্থবিরোধী এবং বাজার অস্থিতিশীল করার কাজ করেন তাদের সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে এই মন্তব্যের পরই বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রভাব ও সক্ষমতা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে সাধারণ্যে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের মতে, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ে যদি খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই দায়িত্ব নিতে হয়, তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রয়োজন কোথায়?

শেয়ার বাটন