Friday, April 19সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

ইসি তিন সপ্তাহ ধরে তথ্য নেবে নতুন ভোটারদের

সীামন্ত ডেস্ক: চলতি মাসের ২০ মে থেকে তিন সপ্তাহ ধরে নতুন ভোটার তথ্য নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোভিডের কারণে গত বছর নতুন ভোটারদের তথ্য নিতে পারেনি ইসি। এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য নেয়া হবে। 

জানা যায়, আগামী ২০ মে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে। এরপর ছবি, বায়োমেট্রিক ও চোখের আইরিশের জন্য কেন্দ্র ঠিক করে সেখানে নেয়া হবে। করোনার কারণে গতবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। 

সর্বশেষ গত ২ মার্চ ইসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। 

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৭-০৮ সালের ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেইবার একইসঙ্গে তিন বছরের তথ্য অর্থাৎ যাদের বয়স ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ১৮ বছর হয়েছে এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। নির্ভুল এনআইডি পেতে ভোটারদের লক্ষ্য রাখতে হবে ফরম-২-তে ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই একজন নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি পেয়ে থাকেন। 

বর্তমানে এনআইডি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিকই সরকারি-বেসরকারি সেবা পান না। যার ফলে নানান সমস্যায় ভুল হওয়া এনআইডি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু নির্ভুল এনআইডি করে এসব ভোগান্তি থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

 এজন্য যেসব নাগরিকরা নতুন করে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন, তারা অবশ্যই ফরম-২ শিক্ষাগত সনদ, জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে মিল রেখে পূরণ করবেন। তাহলে সঠিক ও নির্ভুল এনআইডি পাওয়া সম্ভব হবে। এর আগে, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় করণীয় বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে।

ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন : ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এ যাদের জন্ম ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। তথ্য সংগ্রহকারীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। নিবন্ধনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পূরণ করা ফরম-২ এর সঙ্গে অনলাইন জন্ম সনদ অথবা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাসের সনদের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হবে। 

এছাড়া অন্যান্য কাগজপত্র যেমন- নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র-বাড়ি ভাড়া-হোল্ডিং ট্যাক্স-যেকোনো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের রসিদের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন কেন্দ্রেও ভোটাররা উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শনপূর্বক ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ এর সঙ্গে জন্ম সনদ বা অন্যান্য কাগজাদি সংযুক্ত করে গেঁথে রাখতে হবে। ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ এর ধারা ৩ (ক) এ নামে সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদগুলোর পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধীন নিবন্ধিত নামকে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

তৃতীয় লিঙ্গ : সরকার বাংলদেশের তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেয়ার প্রেক্ষাপটে ভোটার তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্তি করতে পারবেন। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের শনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়ন অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখাতে হবে যে তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয়।

ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কর্তন : ভোটার তালিকাভুক্ত ভোটারদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথচ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন তাদের নাম ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২-এর ২৬(৬) মোতাবেক কর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মৃত ভোটারের নাম কর্তনের লক্ষ্যে ফরম-১২ পূরণপূর্বক সংগ্রহ করবেন। ফরম-১২ এর সঙ্গে অবশ্যই ‘মৃত্যু সনদ’ বা ডাক্তারের সনদ বা চেয়ারম্যান/মেয়র/কাউন্সিলের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে রাখতে হবে। 

এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্টার থেকে মৃত ভোটার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জীবিত ভোটারের নাম লিপিবদ্ধ না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর : এক ভোটার এলাকা থেকে অন্য ভোটার এলাকায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ফরম-১৩ (স্থানান্তর) পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ সরাসরি স্থানান্তরিত এলাকার থানা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়ার পর যথাযথ যাচাই-বাছাই ও তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা যেতে পারে। এছাড়া, তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার স্থানান্তরের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কার্যালয়ে পাঠাবেন।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ : ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটারযোগ্য নারীদের রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ করে মহিলা জনপ্রতিনিধিদের (উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি-পৌরসভার এলাকার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্যসহ নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধিদের) সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদের ওই কমিটিতে দায়িত্ব পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। বিশেষ করে তারা প্রচারের কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও সহযোগিতা দিতে পারেন।

নিবন্ধন কার্যক্রম : নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারের তথ্য সঠিকভাবে এন্ট্রির ক্ষেত্রে ডাটা এন্ট্রির পর তার তথ্যাদি মুদ্রণ করে আবেদনকারীর স্বাক্ষর গ্রহণ এবং স্বাক্ষরিত প্রিন্ট কপিটি নিবন্ধন ফরম ও অন্যান্য ডকুমেন্টসহ স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ডাটার সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখতে হবে। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ভোটারের আইরিশ এবং ১০ আঙ্গুলের ছাপের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করতে হবে।

নিবন্ধন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন : ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার, সিনিয়র জেলা-জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যক্রমে নিবিড় সমন্বয় থাকতে হবে। তাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির কার্যক্রমে সক্রিয় সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাত কমিটির নজরে থাকবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম : কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয়সহ সাতটি কমিটির নজরে থাকবে এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এর কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এই কমিটিগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব খোন্দকার হুমায়ূন কবীরকে সভাপতি করে করা হয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির দায়িত্বে থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার ও সদস্য সচিব থাকবেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। ফরিদপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের জন্য রয়েছে আলাদা দুটি আঞ্চলিক সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে। এরপর জেলা সমন্বয় কমিটি রয়েছে। যেটার দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। 

এরপর উপজেলা সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এবং আহ্বায়ক করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। এরপর সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় কমিটিও করা হয়েছে। যেটার দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সর্বশেষ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। যার দায়িত্বে থাকবেন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার।

আড়াই হাজার ভোটার পাবেন একজন তথ্য সংগ্রহকারী : ইসির অন্য একটি পরিপত্র থেকে জানা যায়, ভোটার তালিকা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গড়ে দুই হাজার ৫০০ জন ভোটারের জন্য একজন করে তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ করা হবে। আর প্রতি পাঁচজন তথ্যসংগ্রহকারীর জন্য একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ দেবে ইসি। ভোটার এলাকার সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক, প্রশাসনিক, ভোটার এলাকার বিন্যাস ও অন্যান্য কারণে উল্লিখিত সংখ্যার হার কমতে বা বাড়তে পারে। বিশেষ করে ভোটার এলাকা অখণ্ড রাখার লক্ষ্যে ওই সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি ৪(৫) অনুসারে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিতে হবে বলে জানিয়েছে ইসি।  

শেয়ার বাটন