

সীমান্ত ডেস্ক: আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশীদারিত্ব এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
আজ বেলা ১১টায় ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে যোগদান করবেন।
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বাংলা : ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’। ইংরেজিতে : ‘Gender equality today, for a sustainable tomorrow’.
এ বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা দেয়া হবে। জাতীয় পর্যায়ে পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছ থেকে সম্মাননা পদক, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করবেন। এ বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার মোসা. সানজিদা আক্তার শিমু।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হলেন রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. হোসনে আরা আরজু। সফল জননী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের খোশনাহার বেগম।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা বরিশাল বিভাগের জেসমিন আক্তার। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন রংপুর বিভাগের মোছা. রোকেয়া বেগম।
নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল।
সময়োপযোগী বিভিন্ন নীতি ও কৌশল গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করায় জেন্ডার গ্যাপের বৈশ্বিক সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষময়াতায়নে বিশ্বে সপ্তম। বাংলাদেশের নারীরা আজ সচিব, বিচারক, সশস্ত্র বাহিনীসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারী ও শিশুর সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি, মাতৃত্বকাল ও কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা তৈরি ও দক্ষতা উন্নয়নে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, সফল নারীদের জয়িতা সম্মাননা, বেগম রোকেয়া পদক, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হচ্ছে।
সরকার কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন, আইসিটির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ে নিরোধ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেবা প্রদানে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার (১০৯), ডিএনএ ল্যাব, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারসহ নানাবিধ কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ সব সময়োপযোগী কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে নারীর সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে। যা আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ-সাউথ, পিস ট্রি, প্ল্যানেট ৫০ : ৫০ চ্যাম্পিয়ন, গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড, এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড, লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, এসডিজি অগ্রগতি এবং মুকুটমণি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। টেলিভিশন ও রেডিওতে নারীর অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উপলক্ষে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং এ বিষয়ে প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে র্যালি, সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের অসামান্য অগ্রগতি, সমতা সৃষ্টি, বৈষম্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ে বন্ধ, সুরক্ষা, সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।