Thursday, April 18সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

জুনে সড়কে প্রাণ গেল ৫২৪ জনের

নিজস্ব প্রতিনিধি: জুন মাসে দেশে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২৪ জন নিহত আর ৮২১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২০৪ জনের মৃতু্যর কারণ মোটর বাইক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ ভোরে, ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ সকালে, ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ দুপুরে, ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বিকালে, ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ সন্ধ্যায় এবং ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ রাতে ঘটেছে।

নিহত ৫২৪ জনের মধ্যে ৬৮ জন নারী ও ৭৩ জন শিশু রয়েছে। ৪৬৭টি দুর্ঘটনার মধ্যে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি।

এসব দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৬ জন, অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এই সময়ে ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ১৬ জন আহত হয়েছে এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য চারজন, বিমান বাহিনীর সদস্য একজন, বিজিবি সদস্য তিনজন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক ১৭ জন, চিকিৎসক দুইজন, পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী দুইজন ও প্রকৌশলী দুইজন, সাংবাদিক তিনজন, আইনজীবী দুইজন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, সমবায় উপপরিদর্শক একজন, বিআরডিবি কর্মকর্তা একজন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩২ জন, পোশাক শ্রমিক ছয়জন, ইউপি সদস্য দুইজন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

সোমবার এক প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী ২০৪ জন (৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ); বাস যাত্রী ২৪ জন (৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ); ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ডাম্পার আরোহী ৩৯ জন (৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ); মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, জিপ যাত্রী ১৪ জন

হ(২ দশমিক ৬৭ শতাংশ); থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার) ১০৬ জন (২০ দশমিক ২২ শতাংশ); স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, চান্দের গাড়ি) ১৩ জন (২ দশমিক ৪৮ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১৭ জন (৩ দশমিক ২৪ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৯টি (৩৪ দশমিক ০৪ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৭৪টি (৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭২টি (১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৫৬টি (১২ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি ১ দশমিক ২৮ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।

এসব দুর্ঘটনার ১০৩টি (২২ দশমিক ০৫ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯৮টি (৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি (২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৩৮টি (৮ দশমিক ১৩ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৪ দশমিক ০৬ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ; ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, তেলবাহী ট্যাংকার, প্রিজনভ্যান, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ; মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ, পুলিশ পিকআপ, আর্মি ট্রাক ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ; যাত্রীবাহী বাস ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ; মোটরসাইকেল ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ; থ্রি হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার) ১৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ; স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র, চান্দের গাড়ি) ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ; বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, প্যাডেল ভ্যান ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (ডাম্পার, ড্রাম ট্রাক, রোড রোলার, ইট ভাঙার গাড়ি) ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলছেন, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৯৩টি। এর মধ্যে ট্রাক ১৩০টি, বাস ৭৮টি, কাভার্ড ভ্যান ২৪টি, পিকআপ ৫৪টি, ট্রলি ১১টি, লরি ৫টি, ট্রাক্টর ১৩টি, তেলবাহী ট্যাংকার দু’টি, প্রিজনভ্যান দু’টি, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক একটি, মাইক্রোবাস আটটি, প্রাইভেটকার ১৩, অ্যাম্বুলেন্স চারটি, জিপ দু’টি, পুলিশ পিকআপ একটি, আর্মি ট্রাক একটি, মোটর সাইকেল ২১২টি, থ্রি হুইলার ১৪৯টি (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫১ (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম, চান্দের গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ২৩টি এবং অন্যান্য ৯টি (ডাম্পার, ড্রামট্রাক, রোড রোলার, ইট ভাঙার গাড়ি)।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, রাজশাহীতে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ১০ শতাংশ ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২৯টি দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত। সবচেয়ে কম রাঙামাটি, মাগুরা, লালমনিরহাট ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এই চারটি জেলায় ৯টি সাধারণ মাত্রার দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কয়েকটি কারণ উলেস্নখ করে বলা হয়, দুর্ঘটনা হয়ে থাকে মূলত ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।

দুর্ঘটনা কমানোর ১০ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহণের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।

শেয়ার বাটন