Wednesday, June 18সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় কালীগঞ্জের বাবলুর বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন

কালিগঞ্জ ব্যুরোঃ জন্মদিন পালনের নামে গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রীদের প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি , কু-প্রস্তাবসহ নানাবিধ নারী, কেলেঙ্কারির ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকদের অভিযোগের ৬ মাস পর অবশেষে তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনুজা মন্ডলের গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে রতনপুর তারকনাথ বিদ্যাপীটের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এবং খড়িতলা চকদাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসানুজ্জামান মুকুলের সমন্বয়ে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। সোমবার (২৬ মে )বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের নিজদেবপুর গ্রামে অবস্থিত উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। তদন্ত কার্যক্রমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মিম ,আছিয়া, লামিয়া, মরিয়ম, নাজিয়া, ছাত্র নাঈমসহ অভিযোগকারী অভিভাবক আবুবক্কার সহ অএ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামীম আক্তার ,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ নবী, অভিভাবক সদস্য ইউপি সদস্য আবু তাহের ,শিক্ষক প্রতিনিধি মুস্তাহিদুল ইসলাম লিটন সহ ম্যানেজিং কমিটি সদস্য ,সুধি , সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। যৌন হয়রানীর ঘটনায় অভিযুক্ত উজ্জীবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আলম বাবলুকে অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে গত ৭ জানুয়ারি বেলা ১১ টার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভা কক্ষে তৎকালীন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আহবানে ম্যানেজিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক প্রতিনিধি শেখ মুস্তাহিদুর রহমান, অহিদুল ইসলাম, নাসরিন সুলতানা, অভিভাবক সদস্য ও শ্যামনগর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ, এনএনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু শাহিন। এর আগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে গত ২১ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১০ কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি গত ১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তৎকালীন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনুজা মন্ডলের নিকট লিখিত জবাব দাখিল করেন। যার প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক শেখ ইকবাল আলম বাবলুকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। এর পরও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রী ,অভিভাবকরা আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। ঐ সভায় উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আকরাম হোসেনকে আহ্বায়ক রতনপুর তারকনাথ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এবং খড়িতলা চকদাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসানুজ্জামান মুকুলকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু এর আগেও কালীগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা কালীন বহু ছাত্রীকে যৌন হয়রানি এবং এক ছাত্রীকে গর্ভপাত ঘটানোর সত্যতা মেলায় তাকে ওই বিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয় । পরে তৎকালীন আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ প্রভাবশালী নেতাকে মোটা অংকের টাকায় রফা দফা করে সেই বহিষ্কারাদেশ থেকে রেহাই পায়। এতেও তার যৌন পিপাসা না মেটায় শ্যামনগরে হায়বাত পুরে ভাড়া বাসায় ছাত্রী সমতুল্য এক হিন্দু গৃহবধুর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় ওঠে। এছাড়াও বহু প্রবাসীর স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক করে টাকা আত্মসাৎ ও সংসার ভাঙা, অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে বলে এলাকার ছাত্র,ছাত্রী ,অভিভাবক, ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং খুলনা বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট পৃথক, পৃথক অভিযোগ এখনো তদন্তাধীন আছে। এ ছাড়াও তিনি উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য এফডিআর এর টাকা তুলে রেজুলেশন জালিয়াতি করে তো টাকা নিজের একাউন্টে রাখা সহ বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্চিত করা এবং গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে অনেক শিক্ষককে বাড়িছাড়া করার সুযোগে ওই সমস্ত শিক্ষকের বাড়িতে যেয়ে পরিবারের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । তার এই বিকৃত যৌনাচারের হাত থেকে রেহাই পাইনি তারই স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী, ছাত্রীরা। গত ৩০ অক্টোবর প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু ছাত্রীদের জন্মদিন পালনের নামে নিজে টাকা দিয়ে কেক এনে বিদ্যালয় ছুটির পরে নিজের অফিসের গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকরা ফুসে ওঠে গত ১৭ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক শেখ ইকবাল আলম বাবলুকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নামে । ঐ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুকে অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে পাওখালিতে অবস্থিত সেনা ক্যাম্পের সদস্যদের সহায়তা নিয়ে অবরুদ্ধ শিক্ষককে উদ্ধার করলে সে যাত্রায় রেহাই পেয়ে আজও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর স্কুলের শতশত শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দিতে আসলে না নেওয়ায় ক্ষিপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা গত ২০ নভেম্বর সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হয়ে অভিযোগ জানায়। যার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২১ নভেম্বর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। তারপরও ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে গত ৫ জানুয়ারি বেলা ১২ টার দিকে ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র সমন্বয়ক কমিটির সভাপতি আরাফাত হোসেন এবং সম্পাদক রনির নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটনার তদন্তে গেলে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক বৃন্দ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের তহবিল তসরূপ ,আত্মসাৎ ও তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে বহিস্কারের দাবি জানান । এরপর জেলা সমন্বয়ক দল বিকাল ৩ টার দিকে কালীগঞ্জে ফিরে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডলের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করে বহুল আলোচিত অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চান। এরপর ঐ দিন বিকাল ৫ টার দিকে জেলা ছাত্র সমন্বয়ক দল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাফিজুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেও অভিযুক্ত ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ছাত্র সমন্বয়করা জানতে চান।

শেয়ার বাটন