

নিজস্ব প্রতিনিধি: সড়কে বেপরোয়া গতির কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। গতিনিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে দুর্ঘটনার হার বাড়বে। গতিনিয়ন্ত্রণে রাখতেই ডিজেলে চালিত প্রতিটি গাড়িতে ‘স্পিড গভর্নর সিল’ (এক ধরনের যন্ত্রাংশ) বসানো হয়। এগুলো বসিয়ে থাকেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) স্পিড গভর্নর সিল মেকানিকরা। ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আইনের একটি ধারার কারণে এই মেকানিকদের কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এবার নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনে।
জানা গেছে, বিআরটিএর প্রতিটি জেলা কার্যালয়ে একজন স্পিড গভর্নর সিল মেকানিক আছেন ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে। সরকারি নিয়ম মেনেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের চাকরির নিয়মিতকরণ করা হয়নি। ২০২৩ সালে তারা নিয়মিতকরণ দাবিতে আদালতে রিট করেন। এর আগেও রিট করা হয়েছে এবং রায় সিল মেকানিকদের পক্ষেই গেছে। ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার কারণে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ২০২৩ সালে তারা যে রিট করেছিল, তার রায় এখনো হয়নি।
জানা গেছে, এখন যারা এ পদে বিভিন্ন সার্কেলে আছেন, তারা আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। অনেক সিল মেকানিক আছেন, যাদের অভিজ্ঞতা প্রচুর। নতুন বাণিজ্যিক বড় গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের আগে স্পিড গভর্নর সিল বসানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সিল মেকানিকরা আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। তাদের সুযোগ-সুবিধা না দিয়েই চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অনেককে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে তারা নানা সমস্যায় পড়বেন।
বিআরটিএ মিরপুর-১ সার্কেলের এক স্পিড গভর্নর সিল মেকানিক দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাকরির বৈধতার জন্য হাইকোর্টে রিট করি। কোর্ট এখনো রায় দেয়নি। আশা করছি, খুব দ্রুত আমরা রায় পাব। আমরা কিন্তু বিআরটিএর জন্য কাজ করি। স্পিড গভর্নর সিল বসানো না হলে গাড়ি ইচ্ছামতো চালাবেন চালকরা। তখন দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে। আওয়ামী লীগের আমলে আমরা কথা বলতে পারিনি। তাই এখন কথা বলছি। নতুন সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে আশা করছি।’
ঝিনাইদহ বিআরটিএ সার্কেলের মেকানিক মো. বাবুল বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলেই আমাদের এ পদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা আগের মতো মর্যাদা পাচ্ছি না। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের পেশার মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। নোটিস ছাড়াই আমাদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। অথচ বিআরটিএর শুরু থেকেই এ পদ রয়েছে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্পিড গভর্নর সিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালের আইনের এক ধারার কারণে এ পদে কর্মরতদের জন্য জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্পিড গভর্নর সিল মেকানিকরা প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। ২০১৮ সালের আইনে অনেক কিছুই বাদ পড়েছে। নতুন আইন করে যারা এ পদে আছেন, তাদের সংযুক্ত করে গাড়িতে স্পিড গভর্নর সিল বসানোর কাজ অব্যাহত রাখা হোক। তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমবে।’
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।