হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকেঃ ২০২৩ -২৪ অর্থবছরে সেবা খাতের ৬,৯১৮৩ টাকা বিদ্যালয়ের কাউকে না জানিয়ে ভুয়া ভাউচারে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে স্ট্যাম, ভ্যাট, আইটি বাদে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা তুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোপাল গাইন নিজের ব্যাংক একাউন্টে রাখার ঘটনা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ায় ফেসবুক সহ বিভিন্ন দপ্তরে, লম্পজম্প, দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে । নিজের অপকর্ম দুর্নীতি ঢাকতে এখন মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে ভাড়া করে ফেসবুক মার্কা কথিত ক্রাইম সাংবাদিক পরিচয় দানকারী ব্যক্তি কে এনে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিজের দুর্নীতি,অপকর্মের মুখোশ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার বেলা ১১ টার সময় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সরকারি কালীগঞ্জ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোপাল গাইনের অফিস কক্ষে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোপাল গাইনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ এর পায়তারার খবর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফলাও ভাবে প্রকাশিত হলে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী সহ উপজেলা জুড়ে চলছে গত কয়েকদিন ধরে নানান আলোচনা, সমালোচনার ঝড়। গত কিছুদিন আগেও বিতর্কিত এই প্রধান শিক্ষকের কন্যা ও অত্র স্কুলের ছাত্রী এবং একই স্কুলের এক ছাত্রের সঙ্গে নিজ বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে অন্তরঙ্গ, মেলামেশার ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চলে নানা আলোচনা সমালোচনা। সেটা কাটিয়ে না উঠতেই তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েই বিদ্যালয় এর সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর পাঁয়তারা করে ধরা খেলেন। টাকা আত্মসাৎ এর খবর প্রকাশ পাওয়ায় তড়িঘড়ি করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে নিজের কতিপয় পোষ্য শিক্ষকদের দিয়ে মালামাল কেনাকাটার ধূম পড়ে গেছে। তবে এই মালামাল কেনা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে চলছে নানান কানা ঘুসো। সূত্র মতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি কালিগঞ্জ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সেবা খাতের ২১ টি বিভাগে মোট ৬,০৯,১৮৩ টাকা বরাদ্দ আসে। খাত গুলো হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৫ হাজার, আপ্যায়ন ব্যয় ২ হাজার , বিদ্যুৎ ৫ হাজার, পানি ৫ হাজার, ইন্টারনেট ২০ হাজার, ডাক ২ হাজার, টেলিফোন ১০ হাজার, বইপত্র সাময়িকি ২৫ হাজার, ভ্রমণ ব্যয় ১৫ হাজার, অন্যান্য মনিহারি মুদ্রণ ও মনোহারি ১৫ হাজার, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ৩৫ হাজার, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ৪০ হাজার, পোশাক কাঁচামাল সামগ্রী ২০ হাজার, অনুষ্ঠান উৎসবাদি বিশেষ ব্যয় ২০ হাজার, কম্পিউটার মেরামত সংরক্ষণ ১০ হাজার, অন্যান্য যন্ত্রপাতিও সরঞ্জাম মেরামত ও সংযোজন ৩৫ হাজার, ভূমি উন্নয়ন কর ৫ হাজার, কম্পিউটার এবং আনুষাঙ্গিক ১০ হাজার, গবেষণার সরঞ্জামাদি১ লক্ষ ২০ হাজার, অফিস সরঞ্জামাদি ১০ হাজার, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ ৩৫ হাজার টাকা। এই নিয়ে মোট বরাদ্দের টাকা হতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শাহিনুর রহমানের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে আগাম ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে জমা দিয়ে স্টাম, ভ্যাট, আই, টি ৪০,৩২৪ টাকা বাদে ৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৫২ টাকা গত ৩০ জুন উত্তোলন করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ গাইন ও তার একান্ত সহযোগী সহকারি প্রধান শিক্ষক আসাফুর রহমানের যোগসাজোগে কাউকে না জানিয়ে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা রাখে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের নিকট ওই স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীরা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করলে পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারীরা সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়। সাংবাদিকরা বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য বিদ্যালয় যেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বেমালুম অস্বীকার করেন। পরে সাংবাদিকদের সামনে অন্যান্য শিক্ষকরা চাপ সৃষ্টি, জিজ্ঞাসা করলে বিষয়টি স্বীকার গেলেও বরাদ্দ পরিমাণ এবং উত্তোলনকৃত টাকার পরিমান এবং কোথায় জমা রেখেছে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। স্কুলের একাউন্ট থাকায় কেন নিজের একাউন্টে রেখেছে এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোপাল গাইন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে সভা ডাকলেও সেখানে বরাদ্দের বিষয়টি জানানো হলেও কত টাকা বরাদ্দের টাকার পরিমানের বিষয়টি জানানো হয়নি। তবে কিছু টাকা এসেছে এই বলে তার গৃহপালিত কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে মনগড়া মালামাল কেনাকাটা অব্যাহত রেখেছে বলে নাম না প্রকাশে ইচ্ছুক শিক্ষকরা সাংবাদিকদের জানান। এর আগেও অনুরূপ বরাদ্দের টাকা স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের না জানিয়ে প্রধান শিক্ষকগণ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে বলে শিক্ষকরা জানান। সরকারি কালীগঞ্জ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত পূর্বক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয় কে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও উপজেলা বাসী।