হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকেঃ অসুস্থতার নাটকে হাসপাতালে ভর্তি, শিক্ষকদের তোপের মুখে স্কুল থেকে শাশুড়িকে নিয়ে পালানো সহ বহুল আলোচিত প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল, সাবেক সভাপতি সুব্রত মন্ডল, বিদ্যুৎসাহী সদস্য সমীর গংয়ের নিয়োগ বাণিজ্যে পছন্দের প্রার্থী কে নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সভাপতির বিরুদ্ধে সভা মানব বন্ধন কর্ম সূচী পন্ড করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার( ২৪ জুন) সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর পি, কে, এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে বিষ্ণুপুর বাজার প্রাঙ্গনে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে বিষ্ণুপুর বাজারে মাইকিং করে সভাপতি সহকারি অধ্যক্ষ দেবদাস মন্ডলের অপসারণের দাবিতে প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল সমীর গং এর নেতৃত্বে চক্রান্ত কারীরা মাইকিং করে মঙ্গলবার সকাল ১০ টার সময় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করতে থাকে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান একাধিক সহিংস মামলার আসামি বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম নেপথ্যে থেকে সব কলকাটি নাড়ছেন বলে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। উক্ত ঘটনা জানার পর উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস সভা সমাবেশ অনুমতি ছাড়া বন্ধের নির্দেশ দেন। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর পি,কে, এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিষ্ণুপুর জমিদার বাড়ির বাবুদের জায়গায় নিজেদের গড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে সন্তোষ বাবুর পুত্র মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সুব্রত মন্ডল দীর্ঘ ২০ বছরের অধিক কাল সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছে। তার সভাপতি দায়িত্বকালীন সময়ে স্কুলের তহবিল তসরুপ সহ নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা ভারতের পাচার করে গাড়ি বাড়ি গড়ে তুলেছে এবং সেখানেই তার পরিবার পরিজন বসবাস করে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ১ জন সভাপতি ২ বারের বেশি থাকতে না পারায় ধুরন্ধর সুব্রত নিজের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য অত্র স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র খুলনা সফুরুন্নেসা মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যক্ষ দেবদাস মন্ডল কে সভাপতি করার জন্য নানান অনুরোধ সহ চাপ দিয়ে রাজি করায়। প্রকৃতপক্ষে দেবদাস মন্ডল সভাপতি হলেও নিজেকে সভাপতি মনে করে সাবেক সভাপতি সুব্রত মন্ডল সবকিছু নিজেই ভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সরকারের সর্বশেষ জনবল কাঠামো এম,পি,ও ২০২১ প্রবিধান অনুযায়ী গত ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল স্বাক্ষরিত দৈনিক পত্র দুত এবং দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার মাধ্যমে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর এবং আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল স্বাক্ষরিত পত্রে নিয়োগ পরীক্ষার অংশ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। সরকারের সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এম,পি,ও নীতিমালা ২০২১ প্রবিধান চলমান কার্যক্রমের সাথে দশ জানুয়ারি পরিপত্রের মাধ্যমে অনুসরণীয় নির্দেশিমালা ২১ জানুয়ারি মা,উ,শি মহাপরিচালক পরিপত্র মেনে চলতে বলা হয়। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে যাচাই কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে পরিপত্র পেয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বোর্ডের লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চলমান নিয়োগ কার্যক্রমে ১০ জানুয়ারি অনুসরণীয় নির্দেশাবলী ২১ জানুয়ারি মা,উ,শি মহাপরিচালকের পরিপত্রের যথাযথ অনুসরণসহ কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে মেধা তালিকায় মধুসূদন মন্ডল প্রথম স্থান এবং আয়া পদে তাপসী সরদার প্রথম স্থান অধিকার করে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসাবে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসাবে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকু, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে কালিগঞ্জ সহকারী কমিশনের (ভুমি) আজাহার আলী, স্কুলের সভাপতি হিসেবে দেবদাস মন্ডল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বাকী বিল্লাহ এবং প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে স্বাক্ষর করে ফলাফল ঘোষণা করে। নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর ফলাফল ঘোষণার পরে সাবেক সভাপতি সুব্রত মন্ডল এবং প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল ও বিদ্যুৎসাহী সদস্য সমীর মন্ডলের নেওয়া ৩০ লক্ষ টাকার দুজন প্রার্থী প্রথম স্থান অধিকার না করতে পারায় নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। সভাপতি দেবদাস মন্ডল নিয়োগ নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হওয়ায় তাদের আবদার রাখতে পারেনি যে কারণে ক্ষুব্দ হয়ে বিদ্যুৎসাহী সদস্য সমীর মন্ডল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে কালিগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ১১৯/ ২৪ মামলা দায়ের করে। এরপর হতে সাবেক সভাপতি সুব্রত মন্ডল বিদুৎসাহী সদস্য সমীর মন্ডল এবং চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমখ মিলে প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল কে জিম্মি করে ফেলে যে কারণে সভাপতি বিদ্যালয়ে মিটিং ডাকলে প্রধান শিক্ষক হাজির না হয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস থেকে চিঠি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলে অসুস্থতার নাটক দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তামাশা শুরু করে। এদিকে উপায়ান্তর না পেয়ে নিয়োগ প্রার্থী মধুসূদন মন্ডল এবং তাপসী সরদার৷ বাদী হয়ে গত ১৯-৫-২০২৪ ইং তারিখে কালিগঞ্জ থানা বিজ্ঞ সিনিয়ার সহকারীর জজ আদালতে দেওয়ানী ১৬৫ /২৪ নং মামলা দায়ের করে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক অজয় মণ্ডল সভাপতি কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে গত ১০ জুন স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারীদের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে গেলে নলতা রূপালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার ফিরোজ হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে বেতন ভাতা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আতাউল হক দোলনকে জানালে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেন সমস্যা নিরসনের জন্য। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ভাড়া সিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বসে নিরসনে পৌঁছানো মাত্রই চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং বিদ্যুৎসাহী সদস্য সমীর মন্ডল প্রধান শিক্ষককে স্বাক্ষর করতে না দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে ঈদের আগে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন ভাতা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষকের উপর চড়াও হলে ওই সময় বিদ্যুৎসাহী সদস্য সমীর মন্ডল এবং প্রধান শিক্ষকের শাশুড়ি আরতি দেবী স্কুল থেকে জানালা ভেঙে পালিয়ে বাহির করে নিয়ে রক্ষা পায় ।সর্বশেষ বিষয়টি নিরাসনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হক দোলন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সংসদের পরে বসার ঘোষণা দিলে সেটা বন্ধ করার জন্য সুব্রত, অজয়, সমীর, জাহাঙ্গীর গংরা নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে স্থানীয় অভিভাবক সুধী সমাজ মনে করছে।