Friday, September 22সময়ের নির্ভীক কন্ঠ
Shadow

এএসআই’র মানুষকে হয়রানি করে টাকা আদায়ের অভিযোগে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মাদক দিয়ে যাকে তাকে ফাঁসানো, জমি বিরোধের নিষ্পত্তির নামে অর্থ নেওয়াসহ নানাভাবে মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ভালুকা মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পাইলট ভৌমিকের বিরুদ্ধে।

এমন সব অভিযোগে পুলিশের এই সদস্যের বিরুদ্ধে পৃথক চারজন ভুক্তভোগী পুলিশ সদরদপ্তর, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় এবং পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় অভিযোগকারীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন পাইলট ভৌমিক।

জানা গেছে, হয়রানি থেকে রেহাই পেতে অনেকে এএসআই পাইলট ভৌমিককে টাকা দেন। তবে টাকা দিয়েও এই পুলিশ সদস্যের হাত থেকে তাদের মুক্তি মেলে না। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর এরইমধ্যে দুটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে শুনানি শুরু করেছে পুলিশের ঊধ্বর্তনরা।

সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তরের আসাদুজ্জামান সেলিম নামে একজন পাইলট ভৌমিকের নামে অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি বলেন, গত ২৯ এপ্রিল ভালুকা মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) বরাবর জমিজমা সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। যার তদন্ত পান এএসআই পাইলট ভৌমিক। তিনি সরেজমিন তদন্তে এসে আমার নিকট ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে অনেক অনুরোধ করে চার হাজার টাকা দিই। এসময় এএসআই ভৌমিক জমির কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলেন। পরেরদিন থানায় গেলে কাগজপত্র দেখে এএসআই পাইলট ভৌমিক বলেন- জমিতে অনেক ভেজাল আছে। এক লাখ টাকা দিলে আমি কাজ করে দেব। পরে আমি এবং আমার সঙ্গে থাকা সুজন মিয়া অনেক অনুরোধ করে ৬০ হাজার টাকায় রফাদফা করি। এসময় এএসআই তাৎক্ষণিক দশ হাজার টাকা নেন। দুইদিন পর একাধিকবার ফোন করা হলে পাইলট ভৌমিক বলেন, আমি খুব ব্যস্ত আছি, থানায় আসো। পরেরদিন থানায় গেলে তিনি বলেন, ‘৪০ হাজার টাকা নিয়ে আসো। তাহলে কাজটা সমাধান করে দেব, না হলে পারব না।’

আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘ঘটনার পর বিষয়টি অবহিত করে পুলিশ সদরদপ্তরে একটি চিঠি দিই। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান এএসআই পাইলট ভৌমিক। তিনি আমার নিকটআত্মীয় সুজন মিয়াকে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সহায়তায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মারধর করেন। এসময় আমি যেন পুলিশ সদরদপ্তরে দেয়া অভিযোগ তুলে নিই সেজন্য সুজনকে হুমকি দেয়া হয়।’

এ ব্যাপারে সুজন মিয়া বলেন, আসাদুজ্জামান সেলিম যে অভিযোগ দিয়েছিল, তার সাক্ষী ছিলাম আমি। যার ফলে এএসআই পাইলট ভৌমিক ১লা সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে উজ্জল মিয়া, শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনকে দিয়ে আমাকে মারধর করায়। তারা এএসআই পাইলট ভৌমিকের নির্দেশে আমাকে মেরে আহত করেছে এবং ভবিষ্যতে পাইলট ভৌমিকের কোনো ক্ষতি হলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। পরে আমি বিষয়টি পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এদিকে এএসআইয়ের সোর্সের কাছে পাওয়া টাকা চাইতে গিয়ে মাদকসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয় জাকির হোসেন নামে আরেক ব্যক্তিকে। ত্রিশাল থানার পোড়াবাড়ি গ্রামের এই ভুক্তভোগী বলেন, গত ১লা আগস্ট রাতে পাওনা টাকা আনতে গেলে এএসআই পাইলট ভৌমিকের সোর্স আসাদ মিয়া আমাকে ধরিয়ে দেয়। পাইলট ভৌমিক আমাকে হেরোইন ব্যবসায়ী বলে থানায় এনে সারারাত হাজতখানায় আটকে রাখে। পরেরদিন দুপুরে ৩০ হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ২০ আগস্ট ডিআইজি অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ডিআইজি স্যার গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয় জানতে পেরে পাইলট আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন।’

স্বপ্না আক্তার নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তার স্বামী কামরুল ইসলাম গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় উপজেলার সিডস্টোর বাজার থেকে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। চেচুয়ার মোড়ে আসা মাত্রই একটি মোটরসাইকেল সেটি গতিরোধ করে। পরে তার স্বামীকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যান এএসআই পাইলট ভৌমিক ও চৌকিদার আলামিন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

তিনি বলেন, রাত ১১টার দিকে আমরা থানায় হাজির হলে একলাখ টাকা ঘুষ দাবি করে এএসআই পাইলট ভৌমিক ও এসআই চন্দন চন্দ্র সরকার। আমরা গরিব মানুষ, এতো টাকা দিতে পারব না বললে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলে। না হলে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে বলে হুমকি দেয়। টাকা জোগাড় না করতে পারার পরেও পরদিন থানায় গেলে তারা রাগান্বিত হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে এসআই চন্দন চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে ২৫ পিস ইয়াবা মামলা দিয়ে আমার স্বামীকে আদালতে পাঠায়।

স্বপ্না আক্তার বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। শুধু আমরা ঘুষের টাকা দিতে পারিনি বলে তারা মাদক দিয়ে আমার স্বামীকে হয়রানি করে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও গফরগাঁও সার্কেল এসপি এবং ভালুকার ওসি বরাবর অভিযোগ দিই। এতে কোনো বিচার পাইনি, তাই বিজ্ঞ আদালতের দারস্থ হয়েছি।

সিডস্টোর এলাকার রাসেল মিয়া বলেন, ৩০ আগস্ট গোয়ারি মুক্তি বাজার থেকে অটোরিকশা চুরির সময় উপস্থিত জনতা চোরকে হাতেনাতে আটক করে। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে থানাকে অবহিত করে। এএসআই পাইলট ভৌমিক এসে চোর এবং অটোরিকশা থানায় নিয়ে যায়। অটোমালিক থানায় গিয়ে তার অটোরিকশা শনাক্ত করলে এএসআই পাইলট ভৌমিক তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। অটোচালক টাকা দিতে পারবেন না জানালে এএসআই পাইলট তাকে হুমকি দিতে থাকেন এবং আটোরিকশা আদালতে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান৷ পরেরদিন (১লা সেপ্টেম্বর) ১১ হাজার টাকা দিয়ে তিনি অটোরিকশা বুঝে পান।

তবে এসব বিষয়ে ভালুকা থানার ওসি কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অনেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছে। তবে এগুলো সত্য নয়।’ পাইলট ভৌমিক একজন ভালো অফিসার হওয়ায় মাদককারবারিরা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে দাবি করেন ওসি।

এদিকে এএসআইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করছেন পুলিশের অভ্যন্তরীণ শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাইলট ভৌমিকের বিরুদ্ধে সুজন মিয়া ও স্বপ্না আক্তার নামে দুজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এরইমধ্যে অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পুলিশ সদরদপ্তরের পাঠিয়ে দেব।’

অভিযোগের বিষয়ে এএসআই পাইলট ভৌমিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে হোক। আমার কাছেও সাক্ষী আছে।’

এবিষয়ে জানতে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এএসআই পাইলট ভৌমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। আমরা তদন্তে যা পাব, ঊধ্বর্তনদের কাছে পাঠিয়ে দেব।’

সুত্রঃ ঢাকা টাইমস ২৪ ডট কম

শেয়ার বাটন